Friday , 20 November 2020 | [bangla_date]

ভ্যাকসিন আবিষ্কারক মুসলিম দম্পতি

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ যখন চোখ রাঙাচ্ছে, তখন বিশ্বখ্যাত ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও জার্মানভিত্তিক বায়োএনটেক কোম্পানিই প্রথম সুখবরটি দিল। অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষ যে অস্ত্রটি হাতে পেতে এত দিন উচাটন হয়ে ছিল, তা-ই ধরা দিল। ভ্যাকসিন। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন। ফাইজার যে ভ্যাকসিনটির ঘোষণা দেয়, তা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ৯০ শতাংশ কার্যকর। এর পরপর আরেকটি ভ্যাকসিনের ঘোষণা দেয় মডার্না। কিন্তু প্রথম তো প্রথমই। আর এ প্রথম ভ্যাকসিনটি ধরা দিল এক নিবেদিত মুসলিম দম্পতির হাত ধরে।

করোনাভাইরাসের হানায় গোটা বিশ্ব থমকে যেতে বাধ্য হয়েছিল। তারপর প্রকোপ কিছুটা কমে এলে ধীরে ধীরে বিভিন্ন দেশ আবার সচল হতে শুরু করে। কিন্তু সেই স্বস্তির সময় পুরোপুরি আসার আগেই শুরু হয়ে গেল করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের চোখরাঙানি। বাড়তে থাকল সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। আর দ্বিতীয় এই আঘাত থেকে বাঁচতে মানুষকেও আবার ঘরবন্দী হওয়ার বাস্তবতা মেনে নিতে হচ্ছে। এই সময়ে এমন একটি সুখবরের মূল্য অনেক।

ভ্যাকসিনটির ঘোষণা দেওয়ার সময় বায়োএনটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) উগার শাহিন বলেন, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ফলে থমকে যাওয়া পৃথিবী আবার সচল হবে, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরে আসবে।

কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পুরো দায়িত্বে ছিলেন বায়োএনটেক কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা তুরস্ক বংশোদ্ভূত জার্মান দম্পতি উগার শাহিন ও ওজলেম তুরেসি। এই মুসলিম দম্পতির মাত্র কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত বায়োএনটেক কোম্পানিটি ইউরোপে খুব একটা পরিচিত না হলেও করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে বিশ্বখ্যাত হয়ে উঠেছে। ড. উগার শাহিন ও ওজলেম তুরেসি মূলত ক্যানসার সেল নিয়ে গবেষণার জন্য বায়োএনটেক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

৫৫ বছর বয়সী ড. উগার শাহিন তুরস্কের ইস্কেন্দেরুন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র চার বছর বয়সে ইস্কেন্দেরুন শহর থেকে অভিবাসী হিসেবে পরিবারের সঙ্গে জার্মানিতে আসেন। বাবা ফোর্ড গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে কোনো রকমে সংসার চালাতেন। ছোট থেকেই উগার শাহিনের ইচ্ছা ছিল চিকিৎসক হওয়ার। নতুন অভিবাসী হিসেবে অনেক কষ্টে চিকিৎসক হলেন শেষ পর্যন্ত। দ্রুতই যোগ দিতে হয় কাজে। কিন্তু এতে থেমে থাকেননি তিনি। কর্মস্থল থেকেই ১৯৯৩ সালে প্রথম পিএইচডি করেন। সেখানেই পরিচয় হয় ড. ওজলেম তুরেসির সঙ্গে। তারপর বিয়ে। দুজন মিলে গড়ে তোলেন বায়োএনটেক নামের একটি গবেষণা কেন্দ্র। মূলত ক্যানসার নিয়ে গবেষণার লক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন তাঁরা। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরির কোনো পরিকল্পনা সে সময় ছিল না। থাকার কথাও নয় কারণ, সে সময়তো এই রোগের কারণ নতুন করোনাভাইরাসটির সংক্রমণই দেখা দেয়নি। এর অস্তিত্ব সম্পর্কেই কেউ ওয়াকিবহাল ছিল না।

এদিকে ড. ওজলেম তুরেসির জন্ম জার্মানিতেই। জন্মের আগেই তাঁর পরিবার জার্মানিতে পাড়ি জমায়। বাবা ছিলেন চিকিৎসক। বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনিও চিকিৎসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। উগার শাহিনের সঙ্গে একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। বর্তমানে ৫৩ বছর বয়সী বায়োএনটেকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ওজলেম তুরেসি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা। ইমিউনলজিস্ট হিসেবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে।

মাত্র দুই বছর আগে জার্মানির একটি সেমিনারে মানবদেহের কোষে অবস্থিত আরএনএ সেল সম্পর্কে গবেষণামূলক তথ্য উপস্থাপন করেছিলেন উগার শাহিন। আরএনএ সেল সম্পর্কে মানুষের বিশদ জ্ঞান থাকলে ভবিষ্যৎ কোনো মহামারির হাত থেকে মানব সভ্যতাকে বাঁচানো সম্ভব বলে সেখানে তিনি উল্লেখ করেছিলেন। সেখানেই পরিচয় হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ফাইজারের সিইও আলবার্ট বোরলার সঙ্গে।

এ বছরের শুরুতে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পরলে আলবার্ট বোরলা বায়োএনটেকের সিইও ড. শাহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং সেই আলাপের সূত্র ধরেই শুরু হয় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের গবেষণা। অবশ্য তার আগেই গত জানুয়ারিতে চীনের উহানে নতুন করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়ার পরই উগার শাহিন ক্যানসার চিকিৎসার জন্য তৈরি এমআরএনএ ওষুধকে এমআরএনএ ভ্যাকসিনে রূপান্তরের প্রাথমিক উদ্যোগটি নেন।

করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর উগার শাহিন ও ওজলেম তুরেসি দম্পতির প্রতিষ্ঠিত বায়োএনটেক কোম্পানির বর্তমান বাজারমূল্য বেড়ে ২৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন (২ হাজার ৫০০ কোটি ৭২ লাখ) ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০১৮ সালে এইচআইভির প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন বায়োএনটেক কোম্পানিকে ৫৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছিল। তাঁদের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে বর্তমানে ১ হাজার ৪০০ গবেষক কর্মরত। বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ড. শাহিন বায়োএনটেককে ইউরোপের সর্ববৃহৎ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন। ফাইজারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে করোনা ভ্যাকসিন তৈরির মাধ্যমে সে স্বপ্নের পথে বায়োএনটেক অনেকটাই এগিয়ে গেছে বলতে হবে।

তাঁদের আবিষ্কৃত করোনা ভ্যাকসিন সম্পর্কে ২০১৯ সালে ইরানের সর্বোচ্চ সম্মানসূচক মুস্তফা অ্যাওয়ার্ড পাওয়া ড. শাহিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানবতার জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সুখবর হচ্ছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে আমরা একটি ভ্যাকসিনের খোঁজ পেয়েছি।’

উগার শাহিন ও ওজলেম তুরেসি দম্পতি মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ করা বিজ্ঞানী। বিজ্ঞান ও মানুষের সেবায় তাঁরা নিবেদিত। নিজেদের প্রতিষ্ঠানের এমন অর্জনে এবং কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের বদৌলতে গোটা বিশ্বের আলোচনার কেন্দ্রে চলা এলেও তাঁরা কিন্তু নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথেই এগিয়ে চলেছেন। একটি সুন্দর পৃথিবীই তাঁদের আরাধ্য স্বপ্ন। যে কারণে এমনকি নিজেদের বিয়ের দিনটিও তাঁরা ক্যানসার গবেষণাতেই কাটিয়েছিলেন।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও

আপনার জন্য নির্বাচিত

বীরগঞ্জে নিলামের মাধ্যমে বালুর লট নিয়ে বিপাকে পড়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রাদার্স ট্রেডার্স

বীরগঞ্জে সামাজিক সম্প্রতি কমিটির আলোচনা সভা

বীরগঞ্জে গ্যাস সিলিন্ডারের অগ্নিকান্ডে নারী-শিশুসহ ৫জন দগ্ধ

খানসামায় পিতাকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগে মাদকাসক্ত ছেলেকে আদালতে সোর্পদ

বাংলাবান্ধা বন্দরে বাড়ছে পাথর আমদানি, সংকট জায়গার!

পীরগঞ্জে যুবলীগের সাবেক সভাপতির ইন্তেকাল

পীরগঞ্জে দৈনিক ভোরের দর্পনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত

কাহারোলে সফল নারী ববিতার প্রতি মাসে আয় ৩০ হাজার টাকা

পীরগঞ্জে ভোট কেন্দ্রে সংঘর্ষ গুলিতে নিহত-৩ জনের লাশ হস্তান্তর ঃ এডিশনাল ডিআইজি’র ঘটনাস্থল পরিদর্শন

দিনাজপুর জেলা বেকারী মালিক সমিতির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় সাইফুল্লাহ, তুহিন ও শামীম পরিষদ বিজয়ী