নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় ফরিদ উদ্দিন আহমেদ নামে এক বৃদ্ধ জাতীয় কল সেন্টার ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাদ্যসহায়তা চাওয়ার পর তাকে জরিমানা করার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি অসহায় এ বৃদ্ধকে যে জরিমানা করা হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ রাষ্ট্রীয়ভাবে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রোববার (২৩ মে) দুপুরে বিষয়টি জানান জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাইন বিল্লাহ।
তিনি বলেন, বৃদ্ধ ফরিদ আহমেদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এ ঘটনার সঠিক তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রেজাউল করিম ও সহকারী কমিশনার কামরুল হাসান মারুফ।
মোস্তাইন বিল্লাহ আরও বলেন, ফরিদ উদ্দিনের পরিবারের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। (জরিমানা বাবদ) তাদের যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। আর তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
গত ২০ মে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের দেওভোগ নাগবাড়ি এলাকা থেকে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাদ্য সহায়তা চান ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরা। সেখানে গেলে ইউএনওকে বলা হয়, ফরিদ আহমেদ চারতলা ভবনের মালিক। তিনি সরকারি সাহায্য পাওয়ার উপযুক্ত নন। পরে তাকে জরিমানা করেন ইউএনও।জরিমানা হিসেবে ১০০ জন গরিবকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণের নির্দেশ দেন তিনি।
সেদিন ইউএনও আরিফা জহুরা বলেন, কাশীপুর ইউনিয়নের ফরিদ আহমেদ তামাশা করতে এবং ৩৩৩ সম্বরে ফোন দিলে খাদ্য পাওয়া যায় কি-না যাচাই করতে ফোন করেন। এজন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ভুল স্বীকার করেন। তাই তাকে জরিমানা করা হয়েছে।
বৃদ্ধ ফরিদকে গত বৃহস্পতিবার জরিমানা করেন ইউএনও
তবে পরদিন গণমাধ্যমের কাছে নিজের অসচ্ছলতার কথা তুলে ধরে বৃদ্ধ ফরিদ জানান, তিনি পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে ইউএনওর ওই আদেশ মেনে নিয়েছিলেন।
তিনি আরও জানান, তার ঘরে ১৬ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী ছেলে, স্নাতক পড়ুয়া মেয়ে এবং বৃদ্ধা স্ত্রী রয়েছে। এক সময় স্থানীয় এক হোসিয়ারি কারখানায় কাটিং মাস্টার হিসেবে কাজ করতেন তিনি। তিনবার ব্রেন স্ট্রোক করার পর চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায় তার। এখন আর কারখানায় কাজ করতে পারেন না বৃদ্ধ ফরিদ। ওই কারখানায়ই শ্রমিকদের ওপর নজরদারি রাখা বাবদ তিনি মাসে আট হাজার টাকা পান। তাতে কোনোরকম চলছিল তার সংসার। কিন্তু করোনায় মহাসংকটে পড়েন তিনি। এরপর নিরূপায় হয়েই তিনি ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাদ্যসহায়তা চান।
বৃদ্ধ ফরিদ জানান, তিনি নিয়মিত এফএম রেডিও শোনেন। রেডিওর সংবাদে তিনি জানতে পারেন, ৩৩৩ নম্বরে কল করে খাদ্যসহায়তা পাওয়া যায়। সরকারি সহায়তা পেতে তিনি কল করেছিলেন ওই নম্বরে। কিন্তু সহায়তা তো পাননি, উল্টো ইউএনওর কাছে তাকে চারতলা ভবনের মালিক বলে কতিপয় লোক উপস্থাপন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও আরিফা জহুরা তাকে ১০০ জনের মাঝে চাল, আলু, ডাল ও লবণ বিতরণ করতে বলেন, যা দিতে তার ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘অসহায় অবস্থায় পড়েছিলাম বলেই সরকারি সহায়তার জন্য ওই নম্বরে কল করেছিলাম। সহায়তা চেয়ে আরও বিপদে পড়েছি। ১০০ জনকে খাদ্যসামগ্রী দেয়ার মতো সামর্থ্য আমার নেই। বাধ্য হয়ে নিজের স্ত্রী ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর গয়না বিক্রি এবং ধারদেনা করে খাদ্যসামগ্রী কিনে বিতরণ করি।’