কাহারোল প্রতিনিধি \ দিনাজপুর কান্তনগর মন্দির প্রাঙ্গনে রাস উৎসব উপলক্ষে জমে উঠেছে মেলা। প্রায় পৌনে তিন শ বছর ধরে চলে আসছে এই কান্তজিউ মন্দিরের এ রাস উৎসব ও মেলা আয়োজন। বিকালের পর থেকে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। পাশাপাশি কান্তজিউ মন্দিরে ভক্ত ও পূর্নার্থীদের মিলন মেলায় পরিনত হয়।
মেলায় প্রবেশের সাথে শোনা যাবে চারিদিকে হই-হুল্লোড়, না হয় ‘দাদা এদিকে আসেন-কি লাগবে ভাই,আসুন দোকানীদের আহবান। আবার কোন দোকান থেকে ভেসে আসবে কেনা-কাটার দরদামের কথা।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রতি বছর রাস পূর্ণিমার তিথিতে রাস উৎসব পালিত হয়। রাজা প্রাণনাথ ১৭০৪সালে কান্তজিউ মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। পরে তার পোষ্যপুত্র রামনাথ ১৭৫২সালে কাজ শেষ করেন। ওই বছর থেকেই কন্তজিউ মন্দিরকে ঘিরে রাস উৎসব ও মেলা বসছে। আর এ উৎসব ও মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ভারত থেকেও শতশত নারী-পুরুষ ভক্ত-পূণ্যার্থী ও পর্যটকেরা এতে যোগ দেন। গত ৭ নভেম্বর রাতে রাস উৎসব ও মেলা শুরু হয়েছে।
মাসব্যাপী এই উৎসব ও মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ব্যবসায়ীরা তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। দোকানিরা চুড়ি, ফিতা, কানের দুল, গলার চেইন, টিশার্ট, প্যান্ট, কাগজ ও প্লাস্টিকের ফুল, চশমা, পুতুলসহ হরেক রকমের খেলনা, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেব-দেবীর মূর্তি বা প্রতিমা, পূজার প্রয়োজনীয় শংখ, ঢোল, কাশা, বাঁশি, প্রদীপ, জিলাপি, খুরমা, মÐা-মিঠাই ও মিষ্টান্ন বিক্রি করছেন। মন্দিরের পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণে দোকানের সারি দেখা যাবে। পছন্দের জিনিসপত্র কিনতে দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন দোকানগুলোতে। এছাড়াও দুটি সার্কাসসহ রয়েছে কাঠের কুয়ার ভিতর মোটরসাইকেলের চক্কর দেয়া আগতদের বিনোদন দিচ্ছে। পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা বেশ উপভোগ করছেন মেলা আয়োজন।
এখানে একেকজন একেক উদ্দেশ্যে নিয়ে আসে। কেউ ভগবানের দর্শনের জন্য আসে, কেউ পরিবারের মানত ও সন্তানদের মঙ্গল কামনা করে আসে। যারা আসে তারা ভাল ফল পেলে পূজা দেন। বীরগঞ্জ থেকে আসা সবুজ রায় বলেন, ১৫-১৬ বছর ধরে এই মেলায় আসি। বড় মন্দিরও আছে। কেনাকাটা করা যাচ্ছে। মন্দির দর্শন করলাম। তবে মেলায় আসা জিনিসপত্রের দাম বেশি মনে হচ্ছে। এক ভক্ত সুকুমার রায় বলেন, রাসমেলায় এসেছি। ভগবানের প্রসাদও পেয়েছি। বাচ্চাদের পছন্দের জিনিস কিনেছি, গরম গরম জিলাপি কিনেছি, বাসায় গিয়ে সবাই মিলে খাবো।
কান্তজিউ মন্দিরের কেয়ারটেকার আপন রায় জানান, দুপুরের পর থেকেই মেলা ও মন্দিরে ভীড় বাড়তে থাকে। রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলে।
এদিকে সব ধরনের নিরাপত্তায় মেলাসহ মন্দিরকে ঘিরে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন কাজ করছেন।

















