বাংলাবান্ধায় স্থলবন্দরে সকালে লোড-আনলোড বন্ধ রেখে শ্রমিকদের কর্মবিরতি, দুপুরে সমঝোতা

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি : দেশের চতুর্দেশীয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ২০২৩-২৪ সালেল ৫% ট্যারিফ বৃদ্ধির দাবিতে কর্মবিরতির পালন করেছে বন্দরের লোড-আনলোড শ্রমিকরা। শনিবার (১৮ ফেব্রæয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেন তারা। এতে করে লোড-আনলোড কার্যক্রম বন্ধ থাকায় লোড-আনলোড বন্ধ থাকায় সড়কের উভয়পাশে আটকা পড়ে শতশত পণ্যবাহী ট্রাক। বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি না মানলে বন্দরে আমদানি-রপ্তানীকৃত সকল পণ্যবাহী গাড়ির পণ্য খালাস করা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা দেয় তারা।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্টের লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের ২৬০৪/২৬০৫ এর শ্রমিকরা কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন। এতে করে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকায় জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত শতশত পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বন্দরের অভ্যন্তরে ইয়ার্ডে ফাকা দেখা যায়। কয়েক ঘন্টা স্থবির হয়ে পড়ে স্থলবন্দরের লোড-আনলোড কার্যক্রম
শ্রমিকদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, চলতি বছরের ২০২৩-২৪ সালের ৫% ট্যারিফ বৃদ্ধি অনুসারে লোড-আনলোড শ্রমিকদের প্রাপ্ত হিস্যা অভিলম্বে প্রদান করতে গত ৭ ফেব্রæয়ারি মৌখিকভাবে এটিআইকে জানানো হয়। কিন্তু এটিআই শ্রমিকদের দাবি মানতে অসম্মতি জানালে আমরা শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা আলোচনাসভা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। এ সিদ্ধান্তে ১৬ ফেব্রæয়ারির মধ্যে ন্যায্য হিস্যা প্রদান না করলে আজ শনিবার থেকে তারা কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থলবন্দরের আমদানিকৃত পণ্যবাহী কোন ট্রাকের লোড-আনলোড বন্ধ ঘোষণা দেন তারা। ।
পরে দুপুর দুইটার দিকে বাংলাবান্ধা বন্দরের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিরসনের লক্ষে শ্রমিক নেতাকর্মীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। এ আলোচনায় শ্রমিকদের দাবি মেনে নিলে সমঝোতার মাধ্যমে সৃষ্ট পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দাবি মেনে নেয়া হলে শ্রমিকরা লোড-আনলোড কাজে ফিরে গেলে স্থলবন্দর পুনরায় সচল হয়ে উঠে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি.রাজ-২৬০৪-২৬০৫) সভাপতি ইদ্রিস আলী জানান, আমরা গত ১৪ ফেব্রæয়ারিতে এটিআই লিমিটেড, বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লেবার হ্যান্ডেলিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর ২০২৩-২৪ সালের ৫% ট্রারিফ বৃদ্ধির প্রাপ্ত হিস্যা অবিলম্বে প্রদানের জন্য ্আবেদন করি। এর আগে মৌখিকভাবে জানালে এটিআই তা অসম্মতি জানায়। যার কারণে আমরা আমাদের দাবি আদায়ের লক্ষে শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্থলবন্দরে পণ্যবাহী গাড়ির পণ্য খালাস থেকে বিরত থেকে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করি। পরে দুপুর দুইটার দিকে স্থলবন্দরের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ সাহেব আমাদের নিয়ে বৈঠক করেন। এ বৈঠকে সমন্বয়ের মাধ্যমে দাবি মেনে নিলে কাজে যোগদান করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ট্রারিফ বৃদ্ধির বিষয়টি মূলত এটিআইয়ের বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লেবার হ্যান্ডেলিং কর্তৃপক্ষ করে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে একটু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। সকালে শ্রমিকরা কর্মবিরতি করছিলেন। তাদের সাথে কয়েকবার বসা হয়েছিল। পরে দুপুরে তাদের সাথে বসে আলোচনার মাধ্যমে সৃষ্ট সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। এখন বন্দরের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
১৯৯৭ সালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরটি। ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর নেপালের সঙ্গে প্রথম এ বন্দর দিয়ে বাণিজ্য কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ২০১১ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয় ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় ভুটানের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক যোগাযোগের বৃহৎ এ স্থলবন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ বন্দর ঘিরে বাণিজ্য খাতে বিপুল রাজস্ব আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।