বিরলের পঙ্গু ভিক্ষুক মন্টু রায়ের জীবনের করুণ কাহিনী
বিরল (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের বিরলে তীব্র তাপদাহ ও প্রচন্ড গরমে যখন জনজীবনে দারুণ অস্থিরতা ও নাজেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। তখন কাঠফাটা প্রখর রৌদ্র অপেক্ষা করে জীবনের তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তিতে বিভিন্ন এলাকায় ছুটে চলছেন, বিরলের পঙ্গু ভিক্ষুক মন্টু রায় (৬২)। প্রতিটি জীবনের একটি কাহিনী থাকলেও এই পঙ্গু ভিক্ষুক মন্টু রায়ের জীবনের করুণ কাহিনী একেবারেই ভিন্ন রকম। মন্টু রায় জন্মগত পঙ্গু ছিলেন না। উপজেলার সদর ইউপি’র রবিপুর গ্রামের মৃতঃ আমিন্দ্র রায়ের পুত্র এই মন্টু রায়। ছোট বেলা থেকেই সুস্থ্য ও সবল হিসাবে মন্টু রায় মানুষের খেত খামারে কাজ করে আসছিলেন। এলাকায় শক্তিমান পুরুষ হিসাবেও পরিচিতি তাঁর। তাই কৃষক, মালিক ও মহাজন প্রকৃতির ব্যাক্তিদের কাছে তাঁর অন্য রকম কদর ছিল। ভারি বা বেশি শক্তির কোন কাজ হলেই মন্টুকে ডাকা হত সে কাজ করার জন্য। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস ১৯৯৮ সালে তাঁর নিজ এলাকায় কাজ করতে গিয়ে কর্তনকৃত ভুট্টা গাছের গড়ার একটি ফলা তাঁর ডান পায়ের তালুতে বিঁধে রক্ত ক্ষরণ হয়। আর এতেই তাঁর জীবনে অন্ধাকার নেমে আসে। প্রথমে বিষয়টিতে তেমন গুরুত্ব দেয়নি মন্টু। অভাব অনাটনে সঠিক সময় চিকিৎস্যা না করাতে পারায় তাঁর পায়ে দিনে দিনে পচন ধরে। ফলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঘটনার প্রায় ৫ মাস পরে তাঁর ডান পা টি হাঁটুর উপর পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়। এক পা হারিয়ে এর পর ক্রাচ কে সঙ্গী করে বাম পায়ে চলাফেরা করতে থাকেন মন্টু । ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটার অভ্যাস না থাকায় আবারোও দূর্ঘটানায় পড়েন তিনি। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস ক্রাচে ভর দিয়ে চলতে গিয়ে হোঁচট খায় মন্টু। হোঁচট খাওয়ার কারণে এবার তার অবশিষ্ঠ বাম পায়ের বুড়ো আঙ্গুল ফেটে রক্ত ক্ষরণ হয়। আর তা থেকে তাঁর এই পায়েও কিছু দিনের মধ্যে পচন ধরে। ফলে ১ বছরের ব্যবধানে শেষ পা টিও হারাতে হয় তাকে। এর পরেই শুরু হয় তাঁর পঙ্গুত্ব জীবনের করুণ কাহিনী ও ভিক্ষাবৃত্তি। সেসময় স্ত্রী, ১ ছেলে ও ২ মেয়েসহ ৫ সদস্যের এই পরিবারটির একমাত্র উপর্জানক্ষম ব্যাক্তি ছিলেন এই মন্টু। ভিক্ষাবৃত্তি করেই মন্টু তাঁর ২ মেয়ের বিয়ে দিলে ছোট মেয়ে বেলী বালা সিজারিয়ান সেকশন জনিত কারণে মারা যায়। এখন ছেলে বাবু রায় (৩৭) সংসারী হয়ে আলাদা বসবাস করে এবং মেয়ে দুলালী বালাও বিয়ের পর স্বামী সংসার নিয়ে ব্যস্ত আছে। পঙ্গু ভিক্ষুক মন্টু রায় জানান, সহায় সম্বল বলতে তাঁর বসত বাড়ীর ৯ শতাংশ জমি ছাড়া আর কিছুই নাই। সরকারি ভাবে পঙ্গুভাতা মাসে ৫০০ টাকা দেয়া হলেও সে টাকায় তাঁর সংসার চলেনা। তাই তাকে জীবনের তাগিদে এমন তাপদাহ, প্রখর রৌদ্র বা ঝড়, বৃষ্টি অপেক্ষা করে ভিক্ষাবৃত্তিতে বের হতে হয়। তিনি জানান, তাঁর এই করুণ জীবন কাহিনী সরকারের দৃষ্টিতে পড়লে গত ২০২০ ইং সালে তাকে সরকারি ভাবে ২ রুম বিশিষ্ট একটি পাকা বাড়ী করে দেয়া হয়। সেই বাড়ীতেই বসবাস করে পঙ্গু ভিক্ষুক মন্টু দম্পত্তি। সরকার বাহাদুর তাঁকে যদি এক যোগে কিছু অর্থ দিত, তাহলে সেই অর্থ দিয়ে অন্তত একটি ছোট দোকান করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতে পারতো। তাই তিনি সরকার বাহাদুরসহ সংশ্লিষ্ট মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

















