চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: সবধরণের মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্কি দেবে যাওয়া, দুর্ঘটনায় দেবে যাওয়া, রঙ নষ্ট হয়ে যাওয়া তেলের ট্যাঙ্কি মেরামতসহ নতুনের মতো করে ঝকে ঝকে রঙ করে দেয়ার সুনাম দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে নিঝুম অটো স্প্রের। আর এ রিপুণ কাজটি করছেন দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দরের নশরতপুর গ্রামের বালাপাড়ার মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি ওইপাড়ার মৃত অসির উদ্দিনের ছেলে।
নিঝুম অটো স্প্রের সত্ত¡াধিকারী মো. রফিকুল ইসলাম জানান, দিনাজপুরের বিরামপুর, নীলফামারীর সৈয়দপুর, ভারতের মোম্বাই ও কলকাতায় এ কাজের শিক্ষা ও দক্ষতা লাভ করেছেন। তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে সফলতা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে এ কাজ করছেন। তার এখানে ১২-১৪ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। এসব শ্রমিকেরা এখানে কাজ করে তাদের পরিবারের ভরণপোষণ করছেন। তার দোকানে দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর, নওগাঁ, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, বগুড়া, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, টাঙ্গাইল, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ট্যাঙ্কির কাজ সারতে আসছেন মোটরসাইকেল মালিক ও মেকারেরা।
তিনি আরও জানান, মোটরসাইকেলের কিছু ট্যাঙ্কির কাজ করতে কমপক্ষে ১৫দিন পর্যন্ত সময় লাগে। আবার কিছু কিছু ট্যাঙ্কির কাজ সঙ্গে সঙ্গে বা ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই দেয়া হয়। খরচের ব্যাপারে বলেন, কাজের ধরণ ও ট্যাঙ্কি দেখে দাম নির্ধারণ করা হয়। তারপরও ট্যাঙ্কির ফুটো বন্ধ ও রঙ করানোসহ ৩ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়। গ্রাহককে ট্যাঙ্কি মেরামতের সময় পর্যন্ত চলার জন্য মোটরসাইকেলে অন্য ট্যাঙ্কি সেট করে দেয়া হয়। পুরো গাড়ি রঙ করাতে খরচ বেশি পড়ে। ১০/১২ বছরের গ্যারান্টি দেয়া হয়।
নিঝুম অটো স্প্রে-তে মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্কির গ্যাস ঝালাইকারী শ্রমিক নীলফামারীর সৈয়দপুরের মো. আশরাফুল (২৩) বলেন, আমি এখানে দৈনিক হাজিরা হিসেবে কাজ করি। দৈনিক হাজিরা পাই ১ হাজার টাকা। যা দিয়ে আমার সংসার চলে।
চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর গ্রামের বালাপাড়ার রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আমি এখানে দৈনিক ৭০০ টাকা হাজিরা হিসেবে কাজ করি। যা দিয়েই আমার পরিবারের ভরণপোষণ হয়ে থাকে।
আরেক শ্রমিক মো. রশিদুল ইসলাম বলেন, আমি দৈনিক ৫০০ টাকা হাজিরা হিসেবে কাজ করি। আমাদের এ দোকানে প্রতিনিয়ত ১২ জন শ্রমিক কাজ করেন। কাজের ধরনের উপর নির্ভর করে আমাদের হাজিরা দেয়া হয়।
পঞ্চগড় দেবীগঞ্জ থানায় কর্মরত কনষ্টেবল মুন্সী জিয়াউর রহমান বলেন, তিনি ও তার এক কর্মকর্তা পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থেকে মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্কি ঠিক করতে এসেছেন। কারণ হিসেবে তারা বলেন, মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্কি ফুটো হয়ে গেছে। যা মেরামত ও রঙ করতেই এখানে এসেছি।
রংপুরের গঙ্গাচড়া থেকে আসা আমিনুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী জানান, খোঁজ পেয়ে এখানে মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্কি মেরামত করতে এসেছি। সড়ক দূর্ঘটনায় মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্কি দেবে ও ফুটো হয়ে গেছে। গত ১৭দিন পুর্বে ট্যাঙ্কির কাজ করার জন্য দিয়ে গেছি। আজকে ডেলিভারী নিলাম। যা দেখতে একেবারে নতুনের মত লাগছে।
সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বলেন, মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্কির কাজ ও পুরো মোটরসাইকেল রঙ করতে এখানে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসেন। এখানে বিশ্বস্ততার সাথে কাজ করেন তারা।
স্থানীয় সাবেক নশরতপুর ইউপি চেয়ারম্যান নূর-এ-আলম সিদ্দিকী নয়ন বলেন, রফিকুল ইসলাম ট্যাঙ্কি মেরামত কাজে অনেক দক্ষ। সে এ কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। এক সময় অভাবে কাটত তার সংসার। এখন সে নিজস্ব
জমিতে দোকার দিয়েছে। তার দোকানে ১০-১২ জন কর্মচারী প্রতিনিয়ত কাজ করে। সে অল্প শিক্ষিত হলেও হাতের বিদ্যা শিখে দক্ষ মেকানিক্সে পরিণত হয়েছে।