চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে মাচায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন চাষিরা। মাত্র ৭০-৯০দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তুলতে পারায় তারা লাভবান হচ্ছেন। গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছেন কৃষকেরা। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, উন্নত জাত ব্যবহার ও স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে এ অঞ্চলের কৃষকরা গরমকালেও উচ্চ ফলনশীল তরমুজ উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ দাবি করেছেন, এ পদ্ধতি জনপ্রিয় ও পরিধি বৃদ্ধি হলে স্থানীয় কৃষি অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধশালী হবে।
উপজেলার ভিয়াইল ইউনিয়নের তরমুজ চাষি রবিউল জানান, এবছর কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় তিনি ২০ শতক জমিতে রঙিলা সুগার কিং ও সুইট ড্রাগন জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় ক্ষেতেই প্রতি কেজি তরমুজ ৩০-৩২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ২০ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ, বীজ ও মাচা তৈরিতে তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার টাকা। খরচ বাদে আড়াই মাসের এ আবাদে ২৫ হাজার টাকা লাভ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করছেন।
তিনি চাষ সম্পর্কে বলেন, জমিতে চাষ দিয়ে পরিমাণ মতো সার ও জৈব সার প্রয়োগ করি। এরপর নির্দিষ্ট দূরত্বে মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে দেই। পরে চারা রোপণ করি। এর ২-৩দিন পর জমিতে সেচ দিই। গাছ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি গাছে খুঁটি এবং ১৫-২০দিন পর মাচা তৈরি করে দিই। পোকা-মাকড়ের আক্রমণ খুবই কম। ফল বড় হওয়ার সময় জালি দিয়ে বেঁধে দিয়েছি। যেন ফল গাছ থেকে ছিঁড়ে না পড়ে। গাছ লাগানোর ৭০-৭৫দিনের মধ্যে তরমুজ বিক্রির উপযোগী হয়। খেতের তরমুজ দেখে অনেক কৃষকই আগ্রহী হয়ে তাঁর নিকট পরামর্শ নিচ্ছেন।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল হাকিম জানান, প্রতি বিঘায় গড়ে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও বিক্রি শেষে ৬০-৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হচ্ছে। বাজারে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের চাহিদা বেশি থাকায় উৎপাদিত ফসল সহজেই বিক্রি করা যাচ্ছে। ফলে ঐতিহ্যবাহী ধান চাষের পাশাপাশি তরমুজ এখন বিকল্প লাভজনক ফসল হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে। চাষাবাদে মালচিং, ড্রিপ সেচ ও জৈব-রাসায়নিক সারের সুষম প্রয়োগের মতো আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করায় গরমেও ভালো ফলন সম্ভব হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। তরমুজ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে এবছর ভিয়াইল ইউনিয়নের ৪জন কৃষককে দিনাজপুর টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সার, বীজ, ওষুধসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ দেয়া হয়। চাষিরা সহযোগিতা পেয়ে তরমুজ চাষ শুরু করেন। ফলন ও দাম ভালো থাকায় কৃষকেরা বেশ লাভবান হয়েছেন। অনেকেই এখন তরমুজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। যা স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পরিকল্পিত বাজার ব্যবস্থাপনা ও রপ্তানি সুযোগ সৃষ্টি হলে চিরিরবন্দরের গ্রীষ্মকালীন তরমুজ দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও সুনাম অর্জন করতে পারবে।