একসঙ্গে জন্মদিনের কেক কেটেছে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া সেই চার শিশুর। রোববার (৩১ আগস্ট) তিন বছর পূর্ণ করে চার বছরে পা রাখলো তারা। দিনভর তাদের দুষ্টুমিতে মেতে থাকে পুরো গ্রাম। দেশ বিদেশের মানুষের এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় অভাবের মধ্যেও সুখেই বেড়ে উঠছে তারা।
২০২২ সালের ৩১ আগস্ট মৌসুমি বেগম নামে এক গৃহবধূ সিজারের মাধ্যমে দিনাজপুরের মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে একসঙ্গে চার সন্তানের জন্ম দেন।
অর্থের অভাবে দুইটি জন্মদিনে সন্তানদের নতুন জামা দিতে না পারা শরিফুল ইসলাম ও মৌসুমি বেগম দম্পতি এবার জন্মদিনে তাদের সন্তানদের জন্য নতুন জামা কিনেছেন। ঘরোয়া পরিবেশে জন্মদিনও পালন করেছেন।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ভান্ডারা ইউনিয়নের ভান্ডারা সরকারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম ও মৌসুমি বেগম। বিয়ের ১০ বছর পর তাদের ঘর আলো করে আসে তিন ছেলে ও এক মেয়ে। সেই থেকে সন্তানদের ভরণপোষণে হিমশিম খাচ্ছেন দরিদ্র বাবা-মা। তবে ভালোবাসার কমতি নেই তাদের ঘরে। দেশ-বিদেশের মানুষের সহযোগিতায় পরম যতেœ বেড়ে উঠছে তারা।
শরিফুল ইসলাম বলেন, ঋণ করে একটি পাওয়ার টিলার কিনেছিলাম। স্ত্রী অন্তঃসত্ত¡া হওয়ার পর চিকিৎসা ও পরে সন্তানদের দুধ কেনার জন্য পাওয়ার টিলারটিও বিক্রি করে দিতে হয়েছে। চার সন্তানের দেখাশুনা করতে গিয়ে ঠিকমতো কাজেও যেতে পারেন না তিনি। এখন কোনো রকম খেয়ে বেঁচে থাকাই কঠিন। চার সন্তান ছাড়াও তার পরিবারে তিনজন মানুষ। তার মধ্যে শরিফুল ইসলাম একাই উপার্জন করেন। সন্তানদের দেখাশুনা করতে গিয়ে কাজে যাওয়াও প্রায় বন্ধ থাকে তার। তবে খবর দেখে অনেকে দেশ বিদেশ থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। সন্তানরা সুস্থ আছে এটাই তার সবচেয়ে বড় পাওয়া। আগামী দিনে স্কুলে ভর্তি করাতে হবে। পড়ালেখার খরচ কীভাবে যোগাবেন তা নিয়ে এখনই চিন্তা হয় তার।
শরিফুল ইসলাম বলেন, খুব ইচ্ছে করে সন্তানদের জন্মদিন পালন করার। কিন্তু অর্থের অভাবে জন্মদিন পালন করতে পারিনি। এবার একজনের সহযোগিতায় ঘরোয়া পরিবেশে জন্মদিন পালন করলাম। সন্তান হওয়ার ১০ বছর আগে বিয়ে হয় শরিফুল ইসলাম-মৌসুমি বেগম দম্পতির। বিয়ের দুই বছরের মাথায় একটি মেয়ে হয়ে মারা যায়। এরপর প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. ইসরাত শারমিনের কাছে চিকিৎসা নেন। দীর্ঘ ৮ বছর পর সিজারিয়ানের মাধ্যমে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট তিন ছেলে ও এক মেয়ের জন্ম দেন মৌসুমি বেগম।