পার্বতীপুর প্রতিনিধি\ ৩০ বছর আগে স্বামী দ্বিজেন মহন্ত মারা গেছেন। গৃহহীন লিভা মহন্ত (৬৫) তিন মেয়ে লিপি, সাধনা ও ফেলানীকে সঙ্গে নিয়ে বসবাস করছেন ২০ বছর ধরে পার্বতীপুর উপজেলার মন্মথপুর ইউনিয়নের দেউল গরুর ডাঙ্গা আবাসন প্রকল্পে। অনত্র মেয়ে সাধনা ও ফেলানীর বিয়ে হয়েছে। ৭ বছর আগে ছোট মেয়ে লিপি মহন্তের স্বামী মারা যায়। সেই সংসারে ১ ছেলে ১ মেয়ে রয়েছে। ছেলেটা ঢাকার বে-সরকারী কোম্পানীতে চাকুরী করছে। মেয়ে দিপ্তী রানী মনমথপুর আইডয়িাল ডিগ্রী কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ভালই যাচ্ছিল লিভার মহন্ত ও তার বিধবা মেয়ে লিপি মহন্ত নাতি-নাতনীর সংসার। হঠাৎ সংসারে নেমে আসে অন্ধকার ঘনঘটা। ২০ মিনিটের আগুনে গরুর ডাঙ্গা আবাসনের ১০টি ঘর নিমিষেই মধ্যে ভস্মিভূত হয়ে যায়। গত সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টায় পাশের ঘরে রাখা ভুট্টার লাকড়ি ও খড়ে লাগা আগুনে ৪টা গরু, ৩ ছাগল, ৯টা হাস, ৩০ টা কবুতর, টিভি, ২টা সিলিং ফ্যান, পানির সাব-মার্সিবল মর্টার, সেলাইমেশিন, ৩ মন চাল ও নগদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পাশের ঘরে আগুনে শেফালী রায় (৫০) ঘরে থাকা আট আনা স্বর্ণের হাতের বালা, কানের দুল, ১৩ হাজার টাকা, ২টা সিলিং ফ্যান, ১টা সৌর ফ্যান, আসবাবপত্র নিমাই পুর্ন ঘরে জিনিসপত্র পুড়ে গেছে।
গরুর ডাঙ্গা আবাসন প্রকল্পের লিভা মহন্ত (৬৫) বলেন, মোর গাওত কোন কাপড় নাই, মুই এ্যালা মানুষের দেয়া কাপড় পরি আছু, মুই এ্যালা শ্যাস হয়া গেনু। তার আহাজারিতে এলাকার আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে আসছে।
গরুর ডাঙ্গা আবাসন প্রকল্পের নাছির উদ্দীন (৬৫) বলেন, ধারনা করা হচ্ছে, লিভা মহন্তের পাশের ঘরে থাকা খড় খুটো থেকে আগুনের সুত্রপাত। তাছাড়া তার সাথে এলাকার কারো সাথে তার কোন ধরনের বিরোধ নেই।
বুধবার সকালে সরেজমিনে গেলে, ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় মনমথপুর আইডয়িাল ডিগ্রী কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী দিপ্তী রানী বলেন, আমি লেখাপড়া পাশাপাশি শেলাই মেশিন ও টিউশনি করতাম। ঘরে থাকা আমার সব বই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমাদের ছিল সব আগুনে শেষ। এখন কি হবে?
মনমথপুর আইডিয়াল ডিগ্রী কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো: গোলাম মোস্তফা জানান, আমাদের কলেজের পক্ষ থেকে খোঁজ খবর নেয়া হয়েছে। দিপ্তী রানীর পরিবারকে কলেজের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
মন্মথপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: ওয়াদুদ আলী শাহ জানান, এঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে শুকনা খাবার ও কম্বল দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: সাদ্দাম হোসেন ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: ছানা উল্লাহ।
এব্যাপারে স্থানীয় সুজন কাজী ও নিমাই পুর্ন বলেন, আগুন লাগার সময় দেগলাগঞ্জ বিদ্যুতের অভিযোগ কেন্দ্রে একাধিকবার ফোন দিয়ে তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি। পার্বতীপুর দমকল বাহিনী কে জানালে তারা জানান, তাদের দমকল বাহিনীর গাড়ীটি নষ্ট। ফলে, তাদের কারও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। পাশের উপজেলা চিরিরবন্দর দমকল বাহিনী আগুন নেভার দেড় ঘন্টা পর ঘটনাস্থলে আসে। তারা যদি সঠিক সময়ে আসতো তাহলে এতো গুলো পুড়ে যেতো না।
পার্বতীপুর ফায়ার সার্ভিস এর স্টেশন মাষ্টার মো: হেমায়েত উদ্দীন বলেন, আমাদের দমকল বাহিনীর গাড়িটি প্রায় ১৫ দিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তাই আমরা পাশের চিরিরবন্দর উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস এর স্টেশন খবর দিয়ে তাদের সহযোগিতা চেয়েছি এবং তারা আগুন নেভানোর জন্য ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ করেছে বলে তিনি দাবি করেন।
ভবেরবাজার সাব-স্টেশন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের কমল চন্দ্র জানান, দেগলাগঞ্জ বিদ্যুতের অভিযোগ কেন্দ্রের লাইনম্যান রিপন রাত ২টা জানালে সঙ্গে সঙ্গে ওই আবাসন এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়া হয়। এখানে আমাদের কোন দায়িত্ব অবহেলা করা হয়নি।
এব্যাপারে পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো: সাদ্দাম হোসেন বলেন, গরুর ডাঙ্গা আবাসন প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার দেয়া হয়েছে। সেই সাথে কলেজ ছাত্রী দিপ্তী রানীর শেলাই মেশিন ও পড়ালেখার বিষয়ে আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করা হবে। পর্যাক্রমে ক্ষতিগ্রত পরিবারগুলো প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।