বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: গ্রামের ফসলের মাঠের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা। সেখানে মুঠোফোন আর ইজিবাইকের হেডলাইটের আলো জ্বলছে। হাতে কোদাল নিয়ে ১০-১২জন যুবক রাস্তায় মাটি দিচ্ছেন, কেউ আবার কাঠের খাটিয়া দিয়ে মাটি পিটিয়ে সমান করছেন। পথচারীরা ফিরে আসতে গিয়ে তাঁদের এ মহৎ উদ্যোগের প্রশংসা করছেন।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এমন দৃশ্য দেখা গেছে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর দাউদপুর গ্রামে। উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ দাউদপুর গ্রামের ইজিবাইক ও ভ্যানচালকেরা স্বেচ্ছাশ্রমে কাটলা-দাউদপুর গ্রামের প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা সংস্কার করেন। কাদা, গর্ত ও উঁচু–নিচু ভরাট করে রাস্তা ব্যবহারযোগ্য করে তোলেন তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বর্ষাকালে রাস্তাটি একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এতে রোগী পরিবহন, কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া, শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়াতসহ সাধারণ মানুষ মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েন।
রাতে রাস্তার কাজ করছিলেন ভ্যানচালক শামসুল আলম। তিনি বলেন, বৃষ্টির দিনে এ রাস্তা দিয়ে ভ্যান চালাইতে পারি না, বাচ্চারা স্কুলে যাইতে পারে না, অসুস্থ রোগীকে নিয়ে যাইতে পারি না। একদিন ভ্যান চালাতে না পারলি আমাদের মুখে ভাত ওঠে না। আমরা যারা এই দাউদপুর-কাটলা রাস্তা দিয়ে চলি, শুধু তারাই জানি এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করা কত কষ্ট!
দক্ষিণ দাউদপুরের ইজিবাইকচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি ভ্যান চালাইয়া খাই, কাজ করলে খাওয়া, না করলে খাওয়া নাই। প্রতি সপ্তাহে ৯০০ টাকা কিস্তি। রাস্তায় ২০ টাকার ভাড়া ১০ টাকাতে মারতেছি, তাও যাত্রী নাই। স্কুলের গাড়ি উল্টে যায়।
দক্ষিণ দাউদপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বিরামপুর পৌরসভা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান প্রতিদিন মোটরসাইকেলে এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন।তিনি বলেন, ইজিবাইক ও ভ্যানচালকদের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে সরকারের এই রাস্তা সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
কাটলাহাট জামে মসজিদের ইমাম রেদওয়ানুল করিম বলেন, যাঁরা রাস্তায় স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই সওয়াবের অংশীদার হবেন।