নাগরিক হিসেবে নারীর ব্যক্তিজীবনের অধিকারের ক্ষেত্রে এখনো নানা বৈষম্য বিরাজমান। নারীর ব্যক্তি অধিকারের প্রশ্নে বাংলাদেশের নারীর জীবন নিজ নিজ ধর্মের পারিবারিক আইন দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় সব ধর্মের নারীর ব্যক্তি অধিকারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সেখানে নাগরিক হিসেবে নারীর মানবাধিকার নানাভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। আমরা জানি, নারীর ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন যেমন-বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার, অভিভাবকত্ব, ভরণপোষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী নারীদের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে, যা সংবিধানে উল্লিখিত নারী-পুরুষের সম-অধিকারের ধারণারও পরিপন্থী। উপর্যুক্ত ক্ষেত্রে নারীর বৈষম্যপূর্ণ অবস্থান সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবারে নারীকে অধস্তন করে রেখেছে, যা নারীর প্রতি প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রতিফলিত হচ্ছে। বাংলাদেশের নারী আন্দোলন তথা মহিলা পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে এই বৈষম্য দূর করে সব ধর্মের নারীর জন্য দেশের অন্য সব নাগরিক আইনের মতো ‘অভিন্ন পারিবারিক আইন’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছে। জাতিসংঘ সিডও কমিটি তার বার্ষিক সমাপনী মন্তব্যে একই সুপারিশ প্রদান করে আসছে।
বুধবার বিকেল ৪টায় মহিলা পরিষদের জেলা কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক সিডও দিবস-২০২৫ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখা আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি ড. মারুফা বেগম-এর সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ডাঃ খাদিজা নাহিদ ইভা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক মো. শফিকুল ইসলাম, নাট্য সমিতির সহ-সভাপতি রবিউল আউয়াল খোকা, সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রহমান রেজু, মহিলা পরিষদ জেলা শাখার সহ-সভাপতি মাহবুবা খাতুন, সাবেক অধ্যক্ষ অর্চনা অধিকারী, মিনতি ঘোষ, মনোয়ারা সানু, অর্থ সম্পাদক শাহনাজ পারভীন, প্রচার সম্পাদক শুকলা কুন্ডু, সদস্য রুমা তিগ্যা, রাবেয়া, তরুণী সদস্য খুকী হেমব্রম, আঁচল সরেন, শতাব্দী কুন্ডু প্রমুখ।
সিডও দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা আরও বলেন, সিডও সনদ নারীর মানবাধিকার সংরক্ষণের অনন্য দলিল। ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয় নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ সিডও। ১৯৮৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর এই সনদের কার্যকারিতা শুরু হয়। এটি জাতিসংঘের একটি যুগান্তকারী বৈশ্বিক দলিল। শতাব্দীকালের নারী আন্দোলনের মাইলফলক অর্জন। সিডও সনদের ভিত্তিতে রয়েছে তিনটি মূলনীতি-বৈষম্যহীনতা, প্রকৃত সমতা এবং রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতা। বাধ্যবাধকতার মধ্যে রয়েছে নারীর মানবাধিকার রক্ষা এবং নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য বৈষম্যমূলক আইন বাতিল, নতুন আইন প্রণয়ন এবং আইনি সমতার পাশাপাশি নারীদের জীবনে প্রকৃত সমতা আনতে ইতিবাচক বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সিডওতে নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকারসহ ব্যাপক পরিসরে নারীর মানবাধিকারের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।