Monday , 6 October 2025 | [bangla_date]

ঠাকুরগাঁওয়ে টানা বৃষ্টিতে আমন ধান ও শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি\ তিন দিনের টানা ঝড-বৃষ্টিতে ঠাকুরগাঁও জেলার আমন ধান ও শীতকালীন সবজিখেতে ব্যাপক ক্ষযক্ষতি হযেেছ। মাঠে পেকে ওঠা ধান পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে আর আগাম সবজির জমিতে দেখা দিয়েছে শিকড পচে যাওয়ার আশঙ্কা। কৃষকেরা চরম হতাশা য় দিন গুনছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে।
রোববার জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, মাঠে পেকে ওঠা আমন ধান বৃষ্টির পানিতে নুয়ে পড়েছে। ধানের শিষ ভিজে রং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, কোথাও কোথাও ঝরে পড়ছে শিষ। মাঠজুড়ে পানি জমে থাকায় হতাশ কৃষকেরা।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আমনচাষি রমজান আলী বলেন,আর কয়েক দিনের মধ্যে ধান কাটতাম। কিন্তু হঠাৎ টানা বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমেছে। শিষ পানিতে ডুবে রং কালচে হয়ে যাচ্ছে। এতে ফলন যেমন কমবে, তেমনি বাজারে ধানের দামও মিলবে না।
রুহিয়া ইউনিয়নের কৃষক ফিরোজ মিয়া বলেন, বছরের আশার ফসল ছিল এই ধান। বৃষ্টিতে অনেকটা নষ্ট হয়ে গেল। খরচ ওঠানোও কঠিন হবে।
কেবল আমন ধান নয়, ক্ষতির মুখে পড়েছেন শীতকালীন সবজিচাষিরাও। মাঠে ইতিমধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি,শসা, টমেটো, বেগুন ও মুলার আবাদ হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে শাক-সবজির খেতে পানি জমে গাছ পচে যাচ্ছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সবজিচাষি রফিকুল ইসলাম জানান, কয়েক দিন আগে শসা আর টমেটো রোপণ করেছি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে খেত ডুবে গেছে। শিকড় পচে গাছ মরে যাওয়ার ভয় পাচ্ছি।’
একই এলাকার নারী কৃষক হালিমা খাতুন বলেন, ফুলকপি আর বাঁধাকপি লাগিয়েছি, গাছ ভালোই হচ্ছিল। কিন্তু পানিতে ডুবে এখন পাতাগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ঋণ শোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে,গত তিনদিনে ঠাকুরগাঁও জেলায় ৩২.৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বর্তমানে জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। পাশাপাশি ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে আগাম সবজি আবাদ হয়েছে প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আলমগীর কবির বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এই সময়ে এতটা টানা বৃষ্টি দেখা যায়নি। টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে মাঠে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় আমন ধান ও শীতকালীন সবজিতে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে যে ধান পাকতে শুরু করেছে, পানিতে ডুবে থাকার কারণে এর গুণমান কমে যাচ্ছে। এতে ফলন কমার পাশাপাশি বাজারে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য পাবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘শীতকালীন সবজি যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, শসা ও মুলা এখন জমিতে রয়েছে। এগুলো অনেকটাই সংবেদনশীল ফসল। জলাবদ্ধতা দীর্ঘ হলে শিকড় পচে গাছ মারা যেতে পারে। তবে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে দ্রুত জমি থেকে পানি নামানো যায়। প্রয়োজনে নালা কেটে পানি বের করে দিতে হবে।’
ক্ষতির হিসাব নিয়ে তিনি বলেন,আমাদের মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন ইউনিয়নে কাজ করছেন। শিগগিরই ক্ষতির একটি সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে। তবে আমরা আশা করছি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ক্ষতি কিছুটা সামলে ওঠা সম্ভব হবে।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও