ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার কাশিপুর জগদল এলাকায় মরিয়ম বেগম নামে এক অসহায় বিধবার উপর হামলা ও বাড়িতে ভাংচুরের ঘটনায় মামলা দায়ের করলেও তদন্তের সঠিক প্রতিবেদন পাচ্ছেন না এছাড়াও বিবাদীদের হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এমনই অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভুগি ঐ নারী।
জানাযায়, মরিয়ম বেগমের স্বামী সলেমান আলী মারা যায় আরও ৯-১০ বছর আছে। নিজের কোন সন্তান না থাকায় মরিয়ম বোনের ছেলেকে লালন পালন করে বিয়ে দিয়ে নিজের কাছেই রাখছেন। পালিত ছেলে ও বৌমাকে নিয়ে ভালোই চলছিল মরিয়মের সংসার। কিন্তু স্বামীর রেখে যাওয়া কিছু যায়গা জমি কাল হয়ে দাড়ায় মরিয়মের। মরিয়মের শত্রুতে পরিনত হয় সলেমান আলীর চাচাতো ভাই ওই এলাকার আতাউর রহমান। মরিয়মের দাবি আতাউর রহমান প্রায় সময় বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করত মরিয়মকে। রাতের আধাঁরে বাড়িতে হামলা বাঁধা দেওয়ায় মরিয়মকে গুরুতর আহত করার অভিযোগ রয়েছে আতাউর রহমানের পরিবারের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় আদালতে মামলাও করেছেন মরিয়ম। রাণীশংকৈল থানার এফআইআর নং ১৪ জিআর নং ১৭৬। কিন্তু মামলার বাস্তব প্রতিবেদন পাচ্ছেন না অসহায় ওই বিধবা নারী মরিয়ম। প্রথমে স্বাক্ষীদের কথা ভূল ভাবে তুলে ধরে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন রাণীশংকৈল থানা পুলিশ আদালতে সেই প্রতিবেদনের না-রাজি দিলে আবার জেলা ডিবি অফিসে পুন:রায় তদন্তের জন্য পাঠায় আদালত। ডিবির কার্যক্রমে এবারও সঠিক প্রতিবেদন না পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন মরিয়ম বেগম। এ দিকে মামলা চলমান থাকলেও আতাউর রহমানের পরিবারের লোকজনের হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মরিয়ম বেগম।
মামলার বিবরণি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২২ জুন ভোরে ছেলে আহাদ আলীসহ আতাউর রহমান পরিবারের লোকজন নিয়ে মরিয়মের বাড়িতে ঘরের দর্জা বাহির থেকে বন্ধ করে হামলা চালায়। এ সময় পাশের দোকান ঘর থেকে বাহির হয়ে মরিয়ম হামলাকারীদের বাঁধা দেয়। ওই সময় মরিয়মের মাথায় আঘাত করে পালিযে যায় হামলাকারীরা। চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে মরিয়মকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে মরিয়মের স্বজনরা। সেই সময় হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক মরিয়মের মাথায় ৬ টি সেলাই করে। মরিয়ম কিছুটা সুস্থ্য হলে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত তদন্ত দেন রাণীশংকৈল থানা পুলিশকে। আদালতের আদেশে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন রাণীশংকৈল থানার এসআই (নিরস্ত্র) কমলেশ চন্দ্র বর্মণ। অভিযোগ রয়েছে এসআই (নিরস্ত্র) কমলেশ চন্দ্র বর্মণ স্বাক্ষীদের সাথে কথা বললেও মনগড়া ভাবে নিজস্ব ব্যক্তিগত মতামত দিয়ে প্রতিবেদন তৈরী করে দাখিল করেছেন। পরে মরিয়ম আদালতে না-রাজি দিলে আদালত আবারও তদন্তর বার দেন ঠাকুরগাঁও ডিবি পুলিশকে। এবার মামলাটির তদন্ত করছেন ডিবি পুলিশের এএসআই রাশেদ। এবারও সঠিক তদন্তের সঙ্কায় মরিয়ম বেগম। কারণ ডিবি পুলিশের এএসআই রাশেদ স্বাক্ষীদের স্বাক্ষী গ্রহণ করেননি। আবার আসামীদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলার অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভুগি মরিয়ম বলেন, আওয়ামীগ সরকারের সময় নানা অত্যাচরের শিকার হয়েছি। মামলা দিয়েও সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন পায়নি। এখনও পাবো কি না জানি না। বরং যাদের নামে মামলা দিয়েছি তাদের হুমকি দিন পার করছি। মামলার প্রধান আসামী কলেজ ছাত্র আহাদকে রক্ষা করতে তারা টাকাকে টাকা রমনে করছে না। আমার নামে উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
মামলার স্বাক্ষী আবু বক্কর বলেন, ঘটনার দিন মরিয়মের চিৎকারে তার বাড়িতে আসি দেখি আহাদ, আতাউর মরিয়মের বাড়িতে হামলা চালিয়ে চলে যাচ্ছে। পুলিশ আমার কথা শুনেছে ঠিকই কিন্তু প্রতিবেদন দেওয়ার সময় আলাদা দিয়েছে। নতুন করে আর পুলিশ আসেনি।
মামলার স্বাক্ষী ও মরিয়মের দেবর আব্দুল সামাদ বলেন, ঘটনা স্থল থেকে আমার বাড়ি ১ কিলো দুরে। ভাবির বাড়িতে হামলার কথা শুনে আসার পরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। হামলাকারীরা আমাদের বংশের বিত্তবান ও প্রভাবশালী। তারা আমাদের জায়গা জমি যবর দখল করে রেখেছে। প্রতিবাদ করার কারণে হামলা পরে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আগে আতাউরের ছিল আওয়ামীলীগের দাপট এখন টাকার দাপট। এ কারণে আমরা নিরুপায়।
অভিযুক্ত আতাউর রহমান মরিয়মের সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, মরিয়ম যা করছে বা বলছে তা সঠিক নয়।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আবগত নয়। খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।