বিকাশ ঘোষ বীরগঞ্জ (দিনাজপুর)প্রতিনিধি: প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হলো দিনাজপুরের বীরগঞ্জে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দেবীর বিদায়ের আগে মন্দির ও মণ্ডেপ মুখরিত হয়ে উঠে সিঁদুর খেলায়। শেষ সময়ে দেবীর কাছে জগতের কল্যাণ প্রার্থনা করেন ভক্তরা। বিকেলে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্তদের মনে ছিল বিরহের ছাপ। মায়ের ভক্তরা বলছেন, আজ মর্ত্য ছাড়বেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা। ফিরবেন কৈলাসে। তাই একটু খারাপ লাগছে। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ ও কল্যাণ এবং সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে নিরম্তর শান্তি ও সম্প্রতির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আজ সমাপন ঘটবে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার।
তিথির কারণে একই দিন দুর্গোৎসবের মহানবমী ও দশমী পূজা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন মন্দির থেকে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ঢেপা নদীর উদ্দেশ্য নসিমন-করিমন ও ট্রাক্টর যোগে রওনা হয়।
গতকাল বুধবার নবমীতে একটি পৌরসভার ৯টিসহ উপজেলার প্রতিটি মণ্ডপগুলোতে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ভিড় থাকলেও উপজেলার জগদল প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণ ও পশ্চিম ভোগডোমা কালিতলা,মরিচা ইউনিয়নের সুন্দরীহাটগাছ,যদুর মোড় ও কুমারপাড়া সর্বজনীন দুর্গা মণ্ডপে ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। ঢাকের বাদ্যির সঙ্গে মন্ত্রপাঠে আনন্দময়ীকে অঞ্জলি দেন ভক্তরা। পূজা ও সন্ধ্যা অরাতি শেষে বিদায়ের সুরে বাজতে থাকে। শান্ত্র অনুযায়ী -শাপলা, শালুক ও বলিদানের মাধ্যমে দেবীর পূজা অর্চনা হয়েছে। তাই ঢাকের বোলে নিনাদিত হচ্ছে -‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষন ঠাকুর যাবে বিসর্জন। ‘
সুজালপুর সনাতন ধর্মাঙ্গণ কালিবাড়ি পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দেবাশীষ দাস বলেন,
‘হিন্দু বিশ্বাসে -বোধনে ‘অরূল আলোর অঞ্জলি নিয়ে আনন্দময়ীর মা উমা দেবীর আগমন ঘটে। টানা পাঁচ দিন মৃণ্ময়ী রূপে মণ্ডপে মণ্ডপে থেকে আজ ফরে ‘যাবে কৈলাসে স্বামী শিবের সান্নিধ্যে। ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপে সংস্থিতা,নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমো নম: মন্ত্রোচ্চারণের ভেতর দূর-কৈলাস ছেড়ে মা পিতৃগৃহে আসেন দোলনায় চড়ে। বিজয়া দশমীতে এয়োস্ত্রীদের দেবীবরণ ও সিঁদুর খেলার পর বিদায় নেবেন আবারও ঘোটকে। রবিবার সকাল থেকেই ঢাক ও শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনির ও অঞ্জলি এবং ঢাকের বাদ্য,নাচ,সিঁদুর খালা। ধান, দূর্বা, মিষ্টি ও আবির দিয়ে দেবীকে বিদায় জানান ভক্তরা। সিঁদুর খেলতে আসা দিপালী ঘোষ বলেন,
দেবী দুর্গার বিদায় বেলায় সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন বাঙালি বধূরা। হিন্দুশাস্ত্র মতে, মহিলারা স্বামীর মঙ্গলকামনার জন্য সিঁথিতে সিঁদুর পরেন। হিন্দু ধর্মে বলা হয়, স্বামীর দীর্ঘ জীবনের কামনা করেই মহিলারা সিঁদুর পরেন। লাল রং শক্তি ও ভালবাসার প্রতীক বলেও মনে করা হয়।
পুরোহিত সুনীল চক্রবর্তী বলেন, দুর্গা মায়ের বিদায়ের ঘণ্টা বেজে গেছে। কৈলাশে ফিরে যাবেন মা দুর্গা। আবার আমাদের অপেক্ষা শুরু হবে আগামী বছরের পূজার জন্য। এদিন দেবী মর্ত্য ছেড়ে কৈলাশে ফিরে যাবেন দোলায় চড়ে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানুষের মনের অসুরিক প্রবৃত্তি, কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।
বীরগঞ্জ উপজেলা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক কমিটির সভাপতি মহেশ চন্দ্র রায় বলেন,
এবারের পূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা নিরাপদে পূজা উদ্যাপন করতে পেরেছেন।
তিনি আরও বলেন, এবছর ১টি পৌরসভার ও উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ১৬৩টি পূজামণ্ডপ কোথাও কোন ধরনের অপীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এজন্য আমরা সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।