চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: চলতি মৌসুমে উঠতি ফসল আমন ধান গোলায় উঠার জন্য দিনক্ষণ গুনছিলেন কৃষক। ঠিক সেই মূহুর্তে কৃষকের লালিত স্বপ্ন অনেকটা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। নি¤œ চাপের কারণে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় আগাম আলু-সবজিসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক জমির আধা-পাঁকা ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। আবার অনেক ক্ষেতের ফসল বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। ফলে পানিতে ভাসছে অনেক কৃষকের সেই লালিত স্বপ্ন। এতে ব্যাপক পরিমাণ ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। টানা হালকা, মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিতে আগাম আলু, সবজি ক্ষেতে পানি জমেছে। এতে আলু বীজে পচন ও সবজি ক্ষেত নষ্ট হতে পারে। অপরদিকে, বিস্তীর্ণ এলাকাব্যাপি ধান ক্ষেত হেলে পড়েছে। এতে কৃষকরা ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। গতকাল ২ নভেম্বর রবিবার উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ২৩ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। অর্জিত হয়েছে ২৩ হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ৮২৬ হেক্টর জমির আগাম জাতের ধান কর্তন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৪২২ হেক্টর জমির ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও বিস্তারিত ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব নিরুপণের জন্য মাঠপর্যায়ে কাজ চলছে বলে সূত্রটি জানায়।
সরজমিন দেখা গেছে, বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় পাকা ও আধাপাকা আমন ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেতের উঠতি ফসল পানিহে নিমজ্জিত রয়েছে। অথচ কদিন আগেও ক্ষেতের চিত্র ছিল ভিন্ন। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছিল সবুজের সমারোহ। স্থানীয় কৃষকরা বলেন, সাধারণত এই সময় আবহাওয়া স্থিতিশীল থাকে।
উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নর খিজির মেম্বারপাড়ার কৃষক আইনুল হক জানান, এবার তিনি ৪ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। কিন্তু ধান বাড়িতে নেয়ার আগেই আড়াই বিঘা জমির ধান বৃষ্টির পানিতে পড়ে গেছে। আমার সবকিছু সর্বনাশ করে দিয়েছে বৃষ্টি।
উপজেলার পুনট্টি ইউনিয়নের হরনন্দপুর গ্রামের কৃষক আফছার আলী খান বলেন, ৫ একর, জাহেদুল ইসলামের ৩ একর ও দক্ষিণ ভবানীপুর গ্রামের গোলেনুর বেগমের ৩ একর জমির ধান বৃষ্টি ও বাতাসে জমিতে পড়েছে গেছে। তারা হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, অনেক কষ্ট করে আবাদ করেছি। এখন ঘরে তোলার পালা। ঠিক সেই মুহুর্তে বৃষ্টি সব নষ্ট করে দিল। ঝড়ো বাতাসে জমির পাকা ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। জমিতে পানি জমে থাকায় ক্ষেতের ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই। ক্ষতি যা হবার তা হবেই।
কিন্তু এবারের আর্কস্মিক বৃষ্টিতে উঠতি আমন ধানসহ রকমারি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে শীতকালীন শাক-সবজি, আগাম জাতের আলু উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে শ্রমজীবী মানুষ কাজ করতে পারছেন না। তাদের আয়-রোজগার প্রায় বন্ধ।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চলমান বৃষ্টির কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি, যেসব জমিতে ধান শুয়ে পড়েছে সেগুলো গোছা করে বেঁধে দিতে। এতে কিছুটা ক্ষতি কম হবে। আর যেসব জমিতে ধান পেকে গেছে সেগুলো কেটে ফেলতে হবে। এছাড়া জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হলে তা দ্রæত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আরও জানান, ক্ষয়-ক্ষতির সঠিক তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। প্রাঘমিকভাবে ৪২২ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ক্ষয়-ক্ষতির বিস্তারিত হিসাব নিরুপণের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে।

















