Thursday , 20 November 2025 | [bangla_date]

সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার সাথে দিনে চৈত্রের কাঠফাটা রোদ আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে পঞ্চগড়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ শিশুদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরা

সামসউদ্দীন চৌধুরী কালাম, পঞ্চগড়
শীতের দিনে শীত তো থাকবেই। কিন্তু আশানুরূপ শীতের দেখা মিলছে না হিমালয় কন্যা বলে খ্যাত দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে আসলেও দিনের প্রখর রোদে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমছে না। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান বেড়ে যাওয়ায় এখনও তেমন একটা শীত অনুভ‚ত হচ্ছে না এই অঞ্চলে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় দেশের মধ্যে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। আর সন্ধ্যা ছয়টায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়ার এই বিরূপ আচরণে বাড়ছে শীতজনীত রোগ। শীতজনিত বিভিন্ন রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। জেলার সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়সহ আশপাশের জেলাগুলোতে মূলত কার্তিকের শুরু থেকেই শীতের আগমন হয়। আর কার্তিকের শেষ থেকে শীত জমে উঠে। কিন্তু কার্তিক পেরিয়ে অগ্রহায়নেও কাংখিত শীতের দেখা মিলছে না। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে গিয়ে অধিক শীত অনুভ‚ত হচ্ছে। আর সকালে সূর্যোদয়ের পর থেকে বাড়তে থাকে রোদের তেজ। দুপুরে প্রখর রোদে খোলা জায়গায় দাড়িয়ে থাকাটাও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। পরিবেশবিদরা বলছেন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঋতু বৈচিত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এরই প্রভাবে শীতের সময়ের কাংখিত শীতের দেখা মিলছে না। পরবর্তি বছরগুলোতে এই প্রভাব আরও বেশি বাড়বে বলে আশংকা করছেন তারা।
এদিকে আবহাওয়ার এ বিরূপ প্রভাব জনস্বাস্থ্যে ফেলছে ব্যাপক প্রভাব। দিনজুড়ে রোদের দাপট থাকলেও রাতে তাপমাত্রা নেমে যাচ্ছে বেশ নিচে। ফলে প্রকৃতিতে তৈরি হয়েছে অদ্ভুত আচরণ। দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা। এরই প্রভাবে জেলার অধিকাংশ এলাকায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জিতে রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে। চিকিৎসকরা বলছেন, দিন-রাতের তাপমাত্রার বড় পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সম্পন্ন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই এই সময়টাতে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
এ নিয়ে কথা হয় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মনোয়ারুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের কারণে চলতি সপ্তাহ থেকে হাসপাতালে শিশু রোগির সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে তিনশ রোগি বহি:বিভাগে আসছে। এদের মধ্য থেকে ২০-২৫ জনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। বাকিদের প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পরামর্শ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জীতেন্দ্র নাথ রায় জানান, চলতি সপ্তাহটাই তেঁতলিয়ায় দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১৩-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে অবস্থান করছিল। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। আগামি সপ্তাহেও সর্বনি¤œ ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা একই ধাকতে পারে। আগে বলা হয়েছিল চলতি মাসের শেষের দিকে পঞ্চগড় জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে এ সম্ভাবনা অনেকটা ক্ষীণ। তবে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও