হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি ঃ সবুজে মোড়া পানের বরজ তবুও কাটছেন না হাকিমপুরের পান চাষীদের হতাশা। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় দিনাজপুরে এ বছর পানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় চাষিরা হতাশ। উৎপাদন ব্যয়, শ্রমিক মজুরি ও সার-কীটনাশকের দাম বহন করতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
কৃষকদের দাবি, লাভ তো দূরের কথা এ দামে পান বিক্রি করে ঘরভাড়া ও বরজের খরচই ওঠে না।
দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলি ও মাধবপাড়া এলাকায় এবার দেখা মিলছে একের পর এক সবুজ পানবরজের। পুরো এলাকার মাঠজুড়ে যেন সবুজ পাতার সমারোহ। ভালো ফলন হলেও বাজারে পানির মতো দামে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানালেন চাষিরা।
হাকিমপুর উপজেলার মাধবপাড়া গ্রামের পানচাষি মাইদুল শেখ বলেন, এখন পান বিক্রি করে কোনো লাভ হচ্ছে না, বরং লোকসান দিতে হচ্ছে। সার, কীটনাশক, সেচ আর শ্রমিকের মজুরি, সবকিছুর দাম বেড়েছে। আগে যে পানে ৫০ টাকা পাওয়া যেত, এখন সেটি ২৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে খরচও উঠছে না।
কয়েকজন পানচাষী বলেন, আমাদের অবস্থা খুব খারাপ। পানের দাম নেই। শ্রমিকের খরচ, সার-ওষুধ দিয়ে কিছুই থাকে না। বরজ সামলাতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছি।
পানবরজে প্রতিদিন কাজ করা শ্রমিকরাও জানান, চাষিরা লাভ না করায় তারাও নিয়মিত মজুরি পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তায় থাকেন। তারা আরো দ বলেন,ফলন ভালো, কাজও বেশি থাকে। কিন্তু বাজারে দাম নাই। চাষিরা আয় না করলে আমরাও টিকে থাকতে পারি না।
পানচাষিদের এমন সংকট প্রসঙ্গে কথা বলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম। তিনি জানান, পোকা-মাকড় দমনসহ সব ধরনের কারিগরি সহায়তা আমরা নিয়মিত দিচ্ছি। বরজে কোনো রোগ-বালাই দেখা দিলে তাৎক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দামের বিষয়টি ডিমান্ড আর সাপ্লাইয়ের ওপর নির্ভর করে। তবে কৃষক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে কৃষি বিভাগ তাদের পাশে রয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫৪০ মেট্রিক টন। বংশ পরম্পরায় পান চাষ করে আসছেন এখানকার চাষিরা। বরজে রোগ প্রতিরোধ ও সঠিক পরিচর্যার জন্য কৃষি বিভাগ নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করে যাচ্ছে।
চাষিদের আশা, সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাজার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিলে আবারও লাভের মুখ দেখবে এ অঞ্চলের হাজারো পরিবার। অন্যথায় লোকসান গুণে ধীরে ধীরে অনেকেই পানের আবাদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হবেন বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

















