বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি\ দুপুরের পর দিনাজপুরের বীরগঞ্জ পৌর হাটে জমে ওঠে মানুষের ভিড়। হাটে সারি সারি টাটকা শাক-সবজির দোকান। তবে শাক-সবজির ভিড়ে চোখে পড়ে এক ভিন্ন দৃশ্য ছোট-বড় স্তূপ করে রাখা কাটা আলু। পাশেই দাঁড়িয়ে কয়েকজন ক্রেতা।
কারো হাতে ঝুড়ি, কারো হাতে ব্যাগ। তাদের চোখে এক ধরনের নরম প্রত্যাশা, রান্নার জন্য সস্তায় আলু মিলবে।
হাটের অন্য পাশে বিক্রেতারা গলা চড়িয়ে ক্রেতা ডাকছেন, ‘কাটা আলু, কেজি ১০ টাকা! ভালো আলু, নিয়ে যান’। দেখতে সাধারণ আলুর মতো হলেও এগুলো হিমাগারের এলুয়েট বা এস্টারিক্স বীজ আলু, যেগুলোর নষ্ট অংশ ফেলে দিয়ে ভালো অংশ কেটে আলাদা করা হয়েছে।
কম দাম, ভালো স্বাদ যা স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এটি ভরসার ঠিকানা।
হিমাগারগুলোতে বীজ আলু উত্তোলনের মৌসুম চলছে। প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ আলু নষ্ট হয়। তবে যেসব আলু পুরোপুরি নষ্ট নয়, সেগুলোর ভালো অংশ ছুরি দিয়ে আলাদা করা হয়।
এই ভালো অংশই স্থানীয় হাট-বাজারে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করা হয়।
বীরগঞ্জ হাট, পৌর বলাকামোড়সহ আশপাশের বাজারগুলোতে এসব কাটা আলুর স্তুপ দেখা যায়। বাজার তুলনায় কম দামে আলু কিনতে না পারা মানুষেরা এখানে ভিড় করেন।
আলু ক্রেতা সাদেকুল ইসলাম, পেশায় দোকানকর্মী, বলেন, ‘বাজারে কাঠিলাল আলু প্রতিকেজি ২০ টাকা, দেশি ২৫ টাকা। কিন্তু এখানে কাটা আলু ১০ টাকা কেজি।
লাল এলুয়েট আলুর স্বাদও ভালো, কম দামে পাই। সংসার চালাতে আমাদের মতো মানুষের এটাই ভরসা।’
আরেক ক্রেতা ভ্যানচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাজারে ২০ টাকার আলু কেনা আমাদের পক্ষে কঠিন। তাই কম দামের এসব কাটা আলু কিনেই পরিবার চালাই।’
বীরগঞ্জ পৌর হাটে আলু বিক্রেতা মো. তানভীর ইসলাম বলেন, ‘হিমাগার থেকে বস্তাভর্তি কাটা আলু পাঁচ থেকে ছয় টাকা কেজি দরে কিনি। হাটে ১০ টাকায় বিক্রি করি। চাহিদাও ভালো আজ ২০০ কেজির মতো এনেছি। এর মধ্যে ৪০ কেজি ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। আশা করছি সব আলুই বিক্রি হবে।’ তিনি বলেন, ‘খরচ বাদে বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা লাভ হয়। নষ্ট অংশ বাদ দিয়ে ভালো অংশটাই বিক্রি করি।’
আলু ব্যবসায়ী বাবু ইসলাম বলেন, ‘এস্টারিক বা এলিয়েট আলু নষ্ট নয়- এমন অংশ কেটে বিক্রি করা হয়। এতে ক্ষতিও অনেক কমে।’
বীরগঞ্জ হিমাদ্রী হিমাগারের ব্যবস্থাপক মোনুর নবী বলেন, ‘এখানে বিভিন্ন কম্পানি ও ব্যবসায়ীর আলু মজুত থাকে। যারা আলু রাখেন, তারাই নষ্ট অংশ ফেলে দেন বা কম দামে বিক্রি করেন। কোল্ড স্টোরেজের নিজস্ব কোনো আলু নেই।’


















