মোবারক আলী, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি: স¤প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ধনদেব বর্মন। কিন্তু এই ডাক্তার শুধু এ ঘটনার জন্য পরিচিত নন নিজ এলাকায় তিনি বরাবরই একজন শিক্ষিত, ন্যায়পরায়ণ, পরোপকারী ও মেধাবী মানুষ হিসেবে সমাদৃত।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বলিদ্বারা গ্রামের কমিউনিস্ট পাটির নেতা মৃত বানেশ্বর বর্মনের ছয় সন্তানের পরিবার। পরিবারটির সদস্যরা সবাই সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপ‚র্ণ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। ধনদেব একজন উচ্চশিক্ষিত পরিবারের ছোট সন্তান। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে, মেয়ে বর্তমানে একটি প্রাইভেট মেডিকেলে ইন্টানি করছে।
স্কুল জীবনেই তার মেধা ও সাহসিকতা তাকে বিশেষ পরিচিতি করে দেয়। ব্যতিক্রম হিসেবে তিনি হিন্দু ধর্মের পরিবর্তে ইসলাম ধর্মের বই পড়তেন। যা এলাকায় আলোচনার বিষয় বস্তুতে পরিনিত হয়। রাণীশংকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ বলেন, “ধনদেব ছিল মেধাবী। ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ইসলাম ধর্ম পড়েছে এবং এসএসসিতে ইসলাম ধর্মে লেটার মার্কস পেয়েছিল। সে কখনো রাজনীতি করত না, অন্যায়ও করত না। খুব প্রিন্সিপলড ছাত্র ছিল।” তার বড় ভাই, অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক বিনোদ বর্মন জানান, “ছাত্রজীবনে সে যেমন ভালো পড়াশোনা করতো, তেমনি ছিল ভাল ফুটবলার। মেডিকেল কলেজসহ কোথাও সে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়নি। ধনদেব যে ন্যায়পরায়ন এটা আমাদের এলাকায় সকলেই জানে।” ধনদেব তার প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন পূর্ব বলদানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। পরবর্তীতে রাণীশংকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ১৯৮৪ সালে এসএসসি, এরপর রাজশাহী ওল্ডগর্মেন্ট কলেজ থেকে ১৯৮৬ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে ২০১৭ সালে এমবিবিএস পাশ করে স্বাস্থ্য বিসিএস এ উত্তীর্ণ হন। সর্বশেষ তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওটি বিভাগের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
প্রসঙ্গত: গত ৬ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য মহাপরিচালক আবু জাফর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিদর্শনে গেলে জরুরি বিভাগ, ওটি ও রোগীসেবা বিষয়ক বিভিন্ন ত্রুটি উল্লেখ্য করেন।
এসময় ডা. ধনদেব বর্মন জনবল-সংকট, অতিরিক্ত কাজের চাপ ও বাস্তব সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এই আলোচনা থেকে তর্ক-বিতর্কের সৃষ্টি হয় এবং ঘটনাটি ভিডিওসহ সামাজিক মাধ্যমে দ্রæত ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার জেরে তাকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শোকজ নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়।
পরদিন তিনি লিখিতভাবে তার আচরণের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ঘটনার পর তার গ্রামের মানুষ, সহপাঠী, শিক্ষক সবাই সামাজিক মাধ্যমে তার পক্ষে সমর্থন জানাচ্ছেন। যা টক অফ দা কান্ট্রিতে পরিণত হয়।
তাদের মতে,“ডা. ধনদেব কোনোদিন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন না। তিনি ন্যায়পরায়ণ, সৎ ও মানবিক একজন চিকিৎসক।”স্থানীয় জনমতে,“যে ছেলে ছাত্রজীবন থেকেই ন্যায় ও আদর্শে অটল, সে অন্যায় করার মানুষ নয়”এমন কথাই শোনা যাচ্ছে সর্বত্র।
এপ্রসঙ্গে ডা.ধনদেব বর্মনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মিডিয়ার সাথে কথা বলতে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের বারণ আছে। তাছাড়া আমি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নয়। দল করিনা আমি স্বাধীন চিন্তা ভাবনা করি।


















