কাহারোল(দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায় ঢেপা নদীর আশ্রম ঘাটের উপর নির্মাণ করা হচ্ছে দীর্ঘ প্রতিক্ষার সেতু। এর ফলে দুপাড়ের এলাকাবাসীর মানুষের মুখে ফুটেছে হাঁসির ঝিলিক । সেতুটি নির্মাণ না হওয়ার কারণে দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসীকে। জেলার কাহারোল উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের আশ্রম ঘাটের উত্তর দিক থেকে বয়ে আসা ঢেপা নদীটি। আর সেই ঢেপা নদীর আশ্রম ঘাটের উপরে এলাকাবাসীর বহু কাঙ্খিত ও প্রতিক্ষার সেতুটির নির্মাণ কাজ এখন পুরোদমে শুরু হয়েছে। সেতুটি নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি ২২ লক্ষ ৩২ হাজার ৪৬৭ টাকা ৩৬ পয়সা। সেতুটি নির্মাণ কাজ করছেন, মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ সরদার পাড়া, জামালপুর। সেতুটির দৈর্ঘ্য ২৮০ মিটার। গত প্রায় এক মাস পূর্ব থেকে সেতুর দু-ধারে প্রাথমিক ভাবে মাটি খনন ও পাইলিং এর কাজ পুরোদমে কাজ শুরু করেছেন ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আশা করা হচ্ছে সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষে আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করা হবে এবং ওই সালেই জনগণের চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি উদ্বোধনের পর খুলে দেওয়া হবে বলে উপজেলা প্রকৌশলী ফিরোজ আহমেদ জানান। এই সেতুটি নির্মিত হলে দীর্ঘ দিনের আশা পূরণ হবে নদীর দু’পাড়ের মানুষ-জনের তথা উপজেলাবাসী সহ বিভিন্ন উপজেলার জনগণের এবং এ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নতি হবে বলে আশা করছেন এই অবহেলিত নদী পাড়ের সাধারণ মানুষেরা। ঢেপা নদীর আশ্রম ঘাটের উপরে স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত সেতু না থাকার কারণে এলাকার লোকজনকে প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে দশ মাইল দিয়ে সৈয়দপুরসহ রাজধানী ঢাকা এবং বিভিন্ন জেলাগুলোতে যেতে হতো। আশ্রম ঘাটের সেতু নির্মিত হলে ২০-৩০ মিনিটের মধ্যে এলাকার ও এই উপজেলার মানুষজন-যানবাহন দশ মাইল থেকে দিনাজপুর শহরে যেতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঢেপা নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত শ্রী শ্রী নিগমানন্দ সেবাশ্রমটি। ওই সেবাশ্রমের পরিচালক, শ্রী নন্দ দুলাল চক্রবর্তী বলেন, ১৯৮৮ সালে ঢেপা নদীর পূর্ব পার্শ্বে শ্রী শ্রী নিগমানন্দ সেবাশ্রম, দাতব্য চিকিৎসালয়, হাই স্কুল, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ করা হয়। কিন্তুু ঢেপা নদীর আশ্রম ঘাটের উপর সেতু না থাকার কারণে উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের মুটুনী হাট সহ বিভিন্ন এলাকা ও গ্রামের লোকজন, বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ লোকজনকে বর্ষার মৌসুমে ঘন্টার পর ঘন্টা নদী পাড়ে দাঁড়িয়ে ও বসে থাকতে হতো। সেতুটি নির্মাণ হলে এলাকার লোকজনকে আর নদীর ঘাটে দাঁড়িয়ে ও বসে থাকতে হবে না। ওই নদীর পাড় এলাকার একজন সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, আমরা এলাকাবাসী কোনো দিন কল্পনা ও ভাবতে পারিনি যে, ঢেপা নদীর উপর আশ্রম ঘাটে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে এবং আমার কাছে স্বপ্নের মত লাগছে। তিনি আরোও বলেন, এই সেতু নির্মাণের ফলে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে।
উল্লেখ যে, বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভ‚ঁইয়া গত ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দিন উত্তরাঞ্চলে সরকারি সফরে প্রথম দিনের প্রথমেই দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলায় সফরে এসে তিনি উপজেলার ঢেপা নদীর আশ্রম ঘাট এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং এই ঢেপা নদীর আশ্রম ঘাটের উপর সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রæতি দিয়ে যায় স্থানীয় এলাকাবাসীর কাছে। তারই প্রতিশ্রæতি আজ বাস্তবায়িত হচ্ছে। আশ্রমঘাট এলাকা পরিদর্শনের সময় উপদেষ্টার সাথে ওই সময় অন্যান্যদের মধ্যে ওই সময় উপস্থিত ছিলেন, উপদেষ্টার একান্ত সচিব (উপ-সচিব) মোঃ আবুল হাসান, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মোঃ রফিকুল ইসলাম, দিনাজপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাসুদুর রহমান, দিনাজপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব) মোঃ মকলেছুর রহমান, দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ নুরে আলম এবং উপজেলা প্রকৌশলী ফিরোজ আহমেদসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা। এদিকে গত ৩ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের (নগর উন্নয়ন-১ অধিশাখার) যুগ্ম-সচিব আবুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ্ খান সেতুটির নির্মাণ কাজ পরিদর্শন ও ভুমি অধিগ্রহণের জন্য তিনি সরেজমিনে কাহারোল উপজেলার ঢেপা নদীর আশ্রম ঘাট এলাকায় পরিদর্শন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, দিনাজপু জেলা প্রশাসক মো: রফিকুল ইসলাম, দিনাজপুর এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মাসুদুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোকলেদা খাতুন মীম, উপজেলা প্রকৌশলী ফিরোজ আহমেদ অন্যান্য কর্মকর্তা বৃন্দ।

















