বোদা,পঞ্চগড় প্রতিনিধি \পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে পরীক্ষা ও ছাড়পত্র ছাড়াই বাজারগুলোতে গবাদি পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। জবাই করা পশুর শরীরে কোনো রোগ-বালাই রয়েছে কিনা এমন কোনো ধারণা নেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের। ফলে সাধারণ মানুষ কি খাচ্ছে তা নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়। আর এ ব্যাপারে আটোয়ারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কোনো তদারকি চোখে না পড়লেও দায় চাপিয়ে দিলেন ইউএনও অফিসের উপর।
এ বিষয়ে আইন প্রয়োগের দায়িত্ব প্রাণী সম্পদ ও স্বাস্থ্য বিভাগের হলেও তাদের কোনো তৎপরতা নেই। ফলে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতা সাধারণ। পশু জবাইয়ের পূর্বে পশু রোগমুক্ত আছে কিনা তা নিশ্চিত না হয়ে পশু জবাই করা হচ্ছে উপজেলার ফকিরগঞ্জ সহ ইউনিয়নগুলোর হাট-বাজারে। কিন্তু এ বিষয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর৷
সচেতন নাগরিক সমাজ বলছে, গবাদি পশু জবাইয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ এটি নিশ্চিত করে যে মাংস রোগমুক্ত এবং মানুষের জন্য নিরাপদ কিনা। বিশেষত অ্যানথ্রাক্স এর মতো মারাত্মক জুনোটিক রোগ (যা পশু থেকে মানুষে ছড়ায়) প্রতিরোধ করতে, যদিও বাস্তবে অনেক মাংস বিক্রেতা এই নিয়ম মানেন না। নিয়ম অনুযায়ী, প্রাণী সম্পদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ছাড়পত্র (সিল) দেবেন, কিন্তু অবহেলা বা তদারকির অভাবে এই প্রক্রিয়াটি প্রায়শই বাদ পড়ে যায়, ফলে ক্রেতারা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন৷
অধিকাংশ মাংস বিক্রেতা নিয়ম মানেন না এবং প্রাণী সম্পদ বিভাগের ছাড়পত্র ছাড়াই জবাই করে।সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় ক্রেতারা অসুস্থ বা মৃত পশুর মাংস কিনে প্রতারিত ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও সেনেটারি অফিসারের উপর নির্দেশ থাকলেও পশুর জবাইয়ের পূর্বে পরীক্ষা করেন না তারা। এছাড়াও গরুর মাংসের গুণগত মান নির্ণয় এবং দাম নির্ধারণে কোন তদারকি না থাকায় উপজেলার বিভিন্ন বাজারে প্রায় সময়ে ফ্রিজের বাসি মাংস বিক্রি করা হয়। রোগাক্রান্ত দুর্বল গরু ছাগল জবাই করে উপজেলা বিভিন্ন বাজারে মাংস বিক্রি করারও অভিযোগ রয়েছে। মাংস বিক্রেতা গণের সিন্ডিকেট এর কাছে জিম্মি উপজেলাবাসী। নিজের ইচ্ছামত দাম বসিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কসাই বলেন, পশু জবাইয়ের আগে ডাক্তারি পরীক্ষা করা হতো অনেক আগে৷ কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে প্রাণীসম্পদ হাসপাতাল থেকে আর কেউ আসেনা৷ আমরা কয়েকবার বলেছিলামও, কিন্তু তারপরও কেউ আসেনা৷ তারা যদি নিয়মিত পশু জবাইয়ের আগে পরীক্ষা করতেন তাহলে আমাদের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা বাড়তো। আমরাও চাই তারা নিয়মিত এসে পরীক্ষা নীরিক্ষা করুক৷
এবিষয়ে আটোয়ারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মোঃ আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের এখানে অনেক আগে থেকে পশু জবাইয়ের আগে ডাক্তারি পরীক্ষার বিষয়টি চালু ছিল। কিন্তু আমাদের জনবলের অভাবে সেটা করা হচ্ছেনা। এছাড়াও এটা শুধু আমাদের একার কাজ নয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদেরকে একটা লোক দিতে হবে। আমরা তাকে নিয়ে কাজ করব। উপজেলা প্রশাসন সাহায্য না করলে এটা সম্ভব না৷ এছাড়াও সেনেটারি অফিসার আমাকে সাহায্য করতে পারে। তাঁরা যদি কেউ না এগিয়ে আসে আমরা কীভাবে কাজ করব। কিন্তু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর নিজে কোনদিন এমন উদ্যোগ নিয়েছে কিনা তার কোনো সদুত্তর এই কর্মকর্তা দিতে পারেননি।
উপজেলা সেনেটারি অফিসার বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর নিজ উদ্যোগে কখনো আমাদেরকে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা বলেনি৷ এছাড়াও তাদের কাজ আর আমাদের কাজ একটু আলাদা। তাদের কাজ হলো-পশু সুস্থ, স্বাভাবিক বা রোগমুক্ত রয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত করে জবাই করা৷ আর আমরা জবাইয়ের পর মাংসটা বাসি, পঁচা কিনা অথবা খাদ্যের মান নিশ্চিত করি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিপামনি দেবী বলেন, এই উপজেলায় আমার আসার মাত্র কয়েকদিন হয়েছে। পূর্বে পশু জবাইয়ের আগে ডাক্তারি পরীক্ষা করা হতো কিনা সেটা নিশ্চিত হতে হবে। তারপর সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলে পুনরায় যেন পশু জবাইয়ের আগে ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করা হয় সেই ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।

















