সামসউদ্দীন চৌধুরী কালাম, পঞ্চগড়
গতকাল বুধবার সকাল নয়টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। তার মানে পঞ্চগড়ে এ মুহুর্তে কোন শৈত্যপ্রবাহ নেই। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ভারী কুয়াশাবেল্টের কারণে দিনভর দেখা মেলেনি সূর্যের। সেই সাথে একাধারে চলছে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা হিম শীতল বাতাস। এতে করে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে গিয়ে তীব্র শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে পঞ্চগড়ের মানুষ। গতকাল বুধবার বিকেল তিনটায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে করে সর্বোচ্চ আর সর্বনি¤œ তাপমাত্রার ব্যবধান দাড়িয়েছে মাত্র ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদরা বলছেন সর্বোচ্চ আর সর্বনি¤œ তাপমাত্রার ব্যবধান যতই কমবে ততই তীব্র শীত অনুভ‚ত হবে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, পঞ্চগড়ের দীর্ঘ ১০ দিনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চললেও শীতের কোন দূর্ভোগ ছিল না এ জেলায়। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ছিল কড়া রোদ। এতে করে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও নিচে নামছিল না। তবে দিনের বেলা সূর্যের তেজ কমতে থাকলে নামতে থাকে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও। গত রোববার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার তা গিয়ে ঠেকে ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বুধবার যা ছিল ১৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জীতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তেঁতুলিয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নিচে অবস্থান করছিল। যা ছিল মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তবে দিনে কড়া রোদের কারণে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কম না হওয়ায় শীতের তীব্রতা বলতে যা বোঝায় তা ছিল না। তবে সূর্য কিরণের প্রভাব কমে আসায় ধীরে ধীরে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে আসছে। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। মাঝে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে গেলেও চলতি মাসের শেষে এবং জানুয়ারীতে তাপমাত্রা আরও কমে যেতে পারে।
তীব্র শীতে মানুষের সাথে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গবাদিপশুও। কৃষকরা চটের বস্তা ঢেকে গরু-ছাগলগুলোকে শীত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। এদিকে ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলা নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষক। পলিথিন দিয়ে ঢেকেও বীজতলার শেষ রক্ষা করতে পারছেন না তারা। এ ছাড়া রয়েছে শীতবস্ত্রের অভাব। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এখন পর্যন্ত বেশ কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা খুবই অপ্রতুল। অধিকাংশ অসহায় শীতার্তদের মাঝে এখনও শীতবস্ত্র পৌছানো সম্ভব হয়নি।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক কাজী মো. সায়েমুজ্জামান বলেন, শীতের এই দুর্যোগে জেলা প্রশাসনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন নিয়মিতভাবেই সেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ অর্থে ৮ হাজার ৬৪০টি কম্বল ক্রয় করে জেলার পাঁচটি উপজেলার ৪৩টি ইউনিয়নে বিতরণ করা হয়েছে। বিশেষ বরাদ্দের অংশ হিসেবেও কিছু শীতবস্ত্র আমাদের কাছে এসেছে। এছাড়া আরও ৬৫ হাজার কম্বলের চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। জেলার বিত্তবান মানুষের কাছে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রেড ক্রিসেন্ট, সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ বিভিন্ন এনজিও শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করছে। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
















