Wednesday , 31 December 2025 | [bangla_date]

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দিনাজপুরের মানুষ শোকে মুজ্যমান

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দিনাজপুরে শোকের ছায়া নেমেছে। দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ প্রিয় নেত্রীকে হারিয়ে গভীরভাবে দুঃখিত। বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই গনেশতলা বিএনপির জেলা কার্যালয়ে সমবেত হন।
দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন দুলাল বলেন, আমাদের দিনাজপুরের কন্যা বিএনপির চেয়ারপারসন ছাড়া আমরা কিছুই ভাবতে পারি না। স¤প্রতি তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলাম, তার আচরণ আমাদেরকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। তার প্রার্থী ঘোষণার পর আমরা তাকে নির্বাচিত করার জন্য মুখিয়ে ছিলাম। কিন্তু স্বপ্নই রয়ে গেল। জাতির জন্য তিনি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিলেন।
দলের সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহম্মেদ কচি বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে যখন দেশ সংকটে ছিল, তখনই তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। এমন নেতা আর জন্মাবে না। রাজনীতির অঙ্গনে আজ আমরা একজন অভিভাবক হারালাম।
সিনিয়র সহসভাপতি মো. মোকাররম হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দেশের গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রেখেছিলেন। তার মৃত্যুতে দেশের রাজনীতিতে যে অপূরণীয় ক্ষতি হলো তা পূরণ করা সম্ভব নয়। দিনাজপুরে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাÐও তার হাত ধরে হয়েছে। আমরা তার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করব।
অন্যদিকে, বেগম খালেদা জিয়ার পৈতৃক বালুবাড়িতে, তার আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত শুভাকাক্ষী এবং দলীয় লোকজন ভিড় করছেন। তার মৃত্যুর খবর শোনার পরপরই বালুবাড়ী পৈতৃক বাড়ি “তৈয়বা ভিলায়” চলছে কোরআন খানি। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তার আত্মার শান্তি পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করছেন। ২০০৬ সালে ১০অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সর্বশেষ দিনাজপুর সফর করেন দিনাজপুর শহরের বালুবাড়িতে দিতলা বিশিষ্ট তৈয়বা ভিলায় এখন আর কেউ থাকেন না। বাবা ইসকান্দার মির্জা ও মা তৈয়বা মজুমদারের মোট পাঁচ সন্তান। বেগম জিয়া দিনাজপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে মেট্রিকুলেশন পাস করেন। এই বাড়িতেই তাদের বেড়ে উঠা। সবাই তাকে পুতুল নামেই চিনতেন। বাড়িটির দোতলায় বেগম খালেদা জিয়ার মা-বাবা যে রুমে থাকতেন সেটি তালা বন্ধ অবস্থায় রাখা হয়েছে। তবে একমাত্র ভাই আমি মিসকান্দার বাড়িতে অবস্থান করেন। চারটি রুম বাবা মা ভাই বোন সবার ছবি টাঙ্গানো রয়েছে। যেখানে পরিবারের সবার ছবি রয়েছে। এই বাড়িটি এখন কেয়ারটেকার একজন মহিলা দেখাশোনা করেন।এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার খালাতো ভাই আবু তাহের এবং পারভিন লাকি কান্না জড়িত কন্ঠে বললেন, খালেদা আপা আমাদের খুব প্রিয় ছিলেন তিনি নীর অহংকার মানুষ ছিলেন। তার শৈশব কৈশোর শহরের এই বালুবাড়ির তৈয়বা ভিলায় কেটেছে। আমার বোন দিনাজপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে এবং সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করেছেন। ২০০৬ সালের ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সর্বশেষ দিনাজপুর সফর করেন।
শৈশব-কৈশোর কেটেছে যে বাড়িতে
বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ি দিনাজপুরে। তিনি এ জেলার মেয়ে। পরিবারের সবাই তাঁকে পুতুল নামে ডাকতেন। বাড়িটি মায়ের নামে ‘তৈয়বা ভিলা’ নামকরণ করা রয়েছে। এই বাড়িতেই কেটেছে তাঁর শিশু ও কিশোরীকাল।
দিনাজপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ১৯৫৪ সালে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। এই বিদ্যালয় থেকেই ১৯৬০ সালে মেট্রিক পাস করেন বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
দিনাজপুর পৌর শহরের বালুবাড়ি এলাকায় অবস্থিত তৈয়বা ভিলায় গিয়ে দেখা যায়, ভবনটি বর্তমান ‘ন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।তবে দ্বিতীয় তলায় বেগম খালেদা জিয়া এবং তাঁর বাবা-মা যে কক্ষে বসবাস করতেন, ঐ কক্ষগুলো সংরক্ষিত হিসেবে তালাবদ্ধ রয়েছে।
এসব কক্ষ রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য কারিনা বেওয়া নামের একজন বৃদ্ধা আছেন। তিনি দীর্ঘদিন খালেদা জিয়ার বাবা-মাকে দেখাশোনা করেছেন। বর্তমান তিনি ঐকক্ষগুলো দেখাশোনা করছেন।
কেয়ারটেকার কারিনা বেওয়া বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এখানে দায়িত্বে আছি। আমি বেগম খালেদা জিয়াকে এখানে এসে পাইনি। তাঁর বাবা-মাকে পেয়েছি। উনারা খুব ভাল মানুষ ছিলেন। আমাকে খুব ভালবাসতেন। আজ পর্যন্ত এখানে আমি আছি। তাঁদের আত্মীয়স্বজনরা প্রায়ই এই বাসায় আসেন।
বেগম খালেদা জিয়ার শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ৭৮ বছর বয়সী মোস্তা হাসানুর নামে এক প্রতিবেশী বলেন, তৈয়বা ভিলাটি খালেদা (পুতুল) আপার মায়ের নামে নামকরণ করা হয়েছে। আপা আমার থেকে দুই থেকে তিন বছরের বড় হবেন। পাশাপাশি বাড়ি আমাদের, আমি সবসময় তাঁদের বাড়িতে যাওয়া-আসা করতাম। তাঁর বাবা-মা আমাকে অনেক ভালবাসতেন এবং পুতুল আপাও আমাকে খুব স্নেহ করতেন।
খালেদা জিয়ার খালাতো ভাই আবু তাহের আবু বলেন, আমি আপার চেয়ে অনেক ছোট। আমি জন্মের পর দিনাজপুরে তাকে পাইনি। জিয়াউর রহমানের সাথে বিয়ের পর তিনি চলে যান। তাঁর মা আমার মায়ের ছোট বোন। তাঁর বাবা-মা আমাকে খুব আদর-যতœ করতেন।।
দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাজমা ইয়াসমিন বলেন, আমি এবং আমার স্কুলের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ধন্য, বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী দেশে-বিদেশে অনেক উচুঁ পর্যায়ে আছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের গর্ব। তিনি আমাদের দিনাজপুরের মেয়ে এবং এই স্কুলেরই শিক্ষার্থী। তিনি ১৯৫৪ সালে এই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। পরে ১৯৬০ এখান থেকে এসএসসি পাস করেন।
গার্লস স্কুলের ছাত্রী থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী
বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট ভারতের জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। খালেদা জিয়ার জন্মের পর প্রথম দুইবছর কাটে জলপাইগুড়িতে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান একটি স্বাধীন দেশ হলে তার বাবা ইস্কান্দার মজুমদার দিনাজপুরে চলে আসেন। সেখান স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
খালেদা জিয়ার শৈশব ও শিক্ষা জীবন কাটে দিনাজপুরে। পাঁচ বছর বয়সে খালেদা খানম পুতুলকে তার বাবা দিনাজপুরের সেন্ট জোসেফ কনভেন্টে ভর্তি করান। সেখানে খালেদা জিয়া প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি দিনাজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (গার্লস স্কুল) থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ভর্তি হন। ১৯৬৩ সালে এ কলেজ থেকে খালেদা জিয়া ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বেগম খালেদা জিয়ার বাবা ইস্কান্দার মজুমদার ফেনী জেলার বর্তমান পরশুরাম উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ব্যবসায়ী ছিলেন। ব্যবসার উন্নতি লাভের আশায় ইস্কান্দার মজুমদার দিনাজপুরে এসেছিলেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টির পর তিনি দিনাজপুরের মুদিপাড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।গ্রেড এইটের ছাত্র ইস্কান্দার মজুমদার ১৯১৯ সালে তার বোন ও ভগ্নিপতির সঙ্গে জলপাইগুড়িতে থাকতে গিয়েছিলেন। বর্তমানে জলপাইগুড়ি ভারতের অন্তর্ভুক্ত। সেখানে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন এবং একটি চা বাগানে চাকরি নেন। পরে তিনি চাকরি ছেড়ে চায়ের ব্যবসা শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি জলপাইগুড়ির ‘চা বাগান সমিতি’র সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেখানে ১৯৩৭ সালের ১৯ মার্চ তার সঙ্গে তৈয়বার বিয়ে হয়। তৈয়বা বর্তমান পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ীর বাসিন্দা। এই পরিবার ‘টি-ফ্যামিলি’ নামে পরিচিত। এই দম্পতির তিন মেয়ে ও দুই ছেলে, যাদের মধ্যে খালেদা জিয়া তৃতীয়। তার মা তৈয়বা মজুমদার ছিলেন সমাজকর্মী। তিনি তাঁর দিনাজপুরের বাড়িতে দুস্থ মহিলাদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করতেন। খালেদা জিয়ার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। দিনাজপুরের মুদিপাড়ায় পিত্রালয়ে ১৯৬০ সালের ৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর তরুণ ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে খালেদা খানম পুতুলের বিয়ে হয়। জিয়া ও খালেদা প্রথম চার বছরের দাম্পত্য জীবন দিনাজপুরে কাটিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া বিয়ের পর জিয়াউর রহমানের গ্রামের বাড়ি বগুড়ার বাগবাড়িতেও থেকেছেন। বিয়ের পর তিনি স্বামীর কর্মক্ষেত্রের কারণে বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করেন।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও

আপনার জন্য নির্বাচিত

হরিপুরের জনগণের সেবক হয়ে কাজ করতে চাই-আব্দুল হামিদ

ফুলবাড়ীতে পিকনিকের বাস উল্টে আহত ১৬

পীরগঞ্জে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ

ঠাকুরগাঁওয়ে শিশুদের মাঝে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উপকরণ বিতরণ

পদ্মাসেতুর সফল নির্মাণকে সইতে পারলেন না বেগম খালেদা জিয়া-এমপি গোপাল

দিনাজপুরে উদ্যোক্তাদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দিনাজপুরে দল গোছাচ্ছে জাতীয় পার্টি ষড়যন্ত্র কারিদের দাত ভাঙ্গা জাবাব দেওয়ার হুশিয়ারি

কলেজ ছাত্র হত্যার বিচার দাবীতে দিনাজপুরে পিতার সংবাদ সম্মেলন

ঠাকুরগাঁওয়ে রাণীশংকৈলে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত

পীরগঞ্জে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইনে ৪ ব্যবসায়ীকে জরিমানা