বিকাশ ঘোষ, বীরগঞ্জ দিনাজপুর প্রতিনিধি: হিমালয়ের কোলঘেঁষা সীমান্তবর্তী উত্তরের জেলা দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় এবার বেশ আগেভাগেই শীতের আগমনী বার্তা জানান দিতে শুরু করেছে। ভোরবেলা পড়তে শুরু করেছে হালকা কুয়াশা। সেই সঙ্গে মৃদু ঠান্ডা শীত অনুভূত হচ্ছে। প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে এ জেলায় শীতের আগমন ঘটলেও এবার আশ্বিন মাসের শেষ ভাগেই শীতের হাওয়া তেমন লাগেনি। হেমন্তের ভোরে ঘাসে পত্রপল্লবে শিশিরবিন্দু ঝলমলে ঝিলিক জানিয়ে যাচ্ছে শীত এসে গেছে। অন্য বছর অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে শীতের আগমন ঘটলেও এবার স্বাভাবিক থাকবে বলেই ভাষ্য আবহাওয়া অফিসের। বীরগঞ্জ উপজেলা হিমালয় কাছে হওয়ায় এ অঞ্চলে আগাম শীত শুরু হয়েছে। এখন দিনে তাপের শোষণ হয়,সে কারণে দিনে বেশি গরম অনুভূত হয়। আর সন্ধ্যার পর থেকে তাপের বিকরণ হওয়ার সাথে শীত পড়া শুরু করে, এ কারণে রাতে ঠান্ডা অনুভব হয়। ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে ঠান্ডা। এদিকে কয়েক দিন থেকে ধরে রাতের বেলা ও ভোরের দিকে কনকনে উত্তরের হিমেল হাওয়া বইতে থাকায় উপজেলা জুড়ে শীতের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন স্থানীয়রা। বীরগঞ্জবাসীরা বলছেন, গত তিন-চার দিন ধরে ভোরবেলা শীত শীত লাগছে। এর ফলে কেউ কেউ হালকা গরম কাপড় গায়ে দিয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছেন। শীতের
ফলে বাজারে দেখা দিয়েছে লেপ-তোষক তৈরির বাড়তি ব্যস্ততা। বর্তমানে ঘরে ঘরে লেপ-তোষক প্রস্তুত ও সংস্কার করতে কারিগরদের কাছে ভিড় বাড়ছে। উপজেলার পৌর শহরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ বাজার পাল্টাপুর,মুকুন্দপুর, সাতোর, শতগ্রাম ও মোহনপুর বাজারে লেপ-তোষক বানানো কারিগরদের এখন সময় কাটছে কাজের চাপে নাভিশ্বাস উঠার মতো অবস্থায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সেলাই মেশিনের শব্দ, তুলা মাড়াইয়ের বাড়তি কর্মযজ্ঞে সব মিলিয়ে চলছে শীত নিবারণের প্রস্তুতি।
কারিগর মো:সুলতান (৬২) প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর দেরিতে ঠান্ডা পড়েছে। মানুষ লেপ-তোষক তৈরিতে করতে শুরু করেছে। বাড়িতে পুরোনো তুলা বের করে নতুন কাপড় কিনে কারিগরদের দিয়ে তৈরির অর্ডার দিচ্ছেন অনেকেই।
বীরগঞ্জ পৌর বাজারের লেপ-তোষক কারিগর মো.সাকিল মাহামুদ (২৮) বলেন, এ বছর এখন পর্যন্ত কাজের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।আমার ছোট একটি দোকানে ৩ জন কারিগর প্রতিদিন কাজ করি। প্রতিদিন ৬-৮টি লেপ-তোষক তৈরির অর্ডার পাচ্ছি। রাতে দেরি পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। তুলা, কাপড়ের দাম বাড়লেও মানুষের কাজের চাহিদা কমেনি। পুরোনো লেপ-তোষক সংস্কারের চাহিদাও বেশি। তুলা তোলে ফাইন করে নতুন করে সেলাই করতে হচ্ছে শীত যত বাড়বে কাজও আরও বাড়বে। এবার আয় ভালো হবে বলে আশা করছি
এদিকে ক্রেতা কল্যান ঘোষ বলছেন, আমি নিজের মতো করে তুলা ও কাপড় নির্বাচন করে দাম অনুযায়ী বানিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকায় সন্তুষ্ট ক্রেতারা।
গ্রামের অনেক পরিবার শীত মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিতে পুরোনো লেপ-তোষক পরিষ্কার ও নতুন তুলা ঢুকিয়ে নরম করে নিচ্ছেন। বিশেষ করে বাড়িতে শিশু ও বয়স্ক সদস্য থাকায় এখনই শীতের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেকেই।
তবে কারিগরদের দাবি, তুলা, কাপড় ও অন্যান্য কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে কিছুটা সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। তবু চাহিদা বেশি হওয়ায় ব্যস্ততাই এখন মূল সঙ্গী। কেউ কেউ আবার অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ দিয়ে কাজ সামাল দিচ্ছেন। পাশাপাশি অনেক কারিগর পরিবার-পরিজনকে সহায়তায় যুক্ত করে বাড়তি আয়ের সুযোগ নিচ্ছেন।
এছাড়া স্থানীয়ভাবে তৈরি লেপ-তোষক ভালো মানের ও টেকসই হওয়ায় বীরগঞ্জ ও আশপাশের মানুষের কাছে এগুলোর আলাদা কদর রয়েছে। ফলে প্রতি বছরই শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যবসায় সক্রিয় হয়ে ওঠেন কারিগররা।
সবশেষে বলা যায় আগাম শীতের আগমন বীরগঞ্জে এনে দিয়েছে কর্মচাঞ্চল্য ও জীবিকার বাড়তি সুযোগ। যে শীত অনেকের জন্য ভোগান্তি বয়ে আনে, সেই শীতই কারিগরদের জন্য ভাগ্য বদলের হাতছানি। শীত যত তীব্র হবে, ততই জমবে লেপ-তোষকের বাজার এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয় কারিগরদের।


















