বোচাগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি।। দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চলছে ভেকু দিয়ে দশ চাকার ড্রাম ট্রাকে জমির উপরি ভাগের মাটি কাটার মহা উৎসব, যেন ঘুমন্ত নগরীর মানুষগুলোর ঘুম ভাংছেনা।
বোচাগঞ্জ উপজেলা সহ সেতাবগঞ্জ পৌর এলাকার ব্যাপক জনস্বার্থের বিষয় বিবেচনা না করে কেবল মাত্র কতিপয় ব্যবসায়ী কর্তৃক মিল কারখানা স্থাপন, ইটভাটার জন্য মাটি সংগ্রহ, অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খনন করার ফলে কৃষি জমির উর্বর মাটি (টপ সয়েল) বিভিন্ন এলাকা থেকে কেটে আনার ফলে শতশত হেক্টর কৃষি জমি হারাচ্ছে তার উর্বরতা শক্তি। উপজেলায় নদী খনন করার পর নদীর পার বেধে দেওয়া মাটিও চুরি হচ্ছে প্রকাশ্যে এবং অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খননে জলাবদ্ধতার ফলে পানি নিস্কাশনে চরম বাধা সৃষ্টি করছে। যার ফলে বর্ষা মৌসমে আমন ধানের রোপা পঁচে নষ্ট হয়ে কৃষক চরম আর্থিক ক্ষতির স¤ু§ক্ষিন হচ্ছেন এবং এলাকায় ফসল উৎপাদন মারাত্বক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলার প্রত্বন্ত অঞ্চলে কোন বাধা নিষেধ ছাড়াই তিন ফসলি জমির উপরিভাগ (টপ সয়েল) কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। ওই জমির মাটি কেটে অবৈধ ড্রাম ট্রাকে তুলে আশপাশের বিভিন্ন ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। সারা বছর ধরে চললেও শীত মৌসুমে ব্যপকহারে চলছে এই ধ্বংসযজ্ঞ। কতিপয় ব্যক্তি এ কাজ করছেন। সচেতন কৃষকরা বাধা দিয়েও মাটি বিক্রি থামাতে পারছেন না। এজন্য প্রশাসনের কঠোর হস্থক্ষেপ চেয়েছেন তারা। জানা যায়, বোচাগঞ্জ উপজেলার সঙ্গবদ্ধ কয়েকটি চক্র গ্রামের সহজ সরল কৃষকদের মোটা অংকের টাকার লোভ দেখিয়ে তাদের তিন ফসলী জমির মাটি ক্রয় করে নিচ্ছেন। সেই সঙ্গবদ্ধ চক্রটি উচ্চ মুল্যে বিভিন্ন ইটভাটায় সেই মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। গত কয়েকদিনে বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ২০ শতাংশ জমির টপ সয়েল কাটা হয়েছে। তিন থেকে চার ফুট গভীর করে মাটি তুলে নেওয়া হচ্ছে। আর ওই মাটি ট্রাকটার ও ১০ চাকার ড্রাম ট্রাকে পরিবহনের জন্য অন্য কৃষি জমির ওপর দিয়ে টাকার লোভে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে ওই জমির মালিকরাও নিজের অজান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এছাড়া মাটি পরিবহনের ফলে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মান গ্রামীণ পাকা সড়কও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, যা কিছুদিন আগে সংস্কার করা হয়েছিল। এতে বর্ষাকালে তাদের জমি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রির ফলে জমির উর্বরতা শক্তিও কমে যাচ্ছে। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী কৃষি জমির টপ সয়েল কাটা, বিক্রি দন্ডনীয় অপরাধ। এতে ২ বছরের কারাদন্ড ও অর্থ দন্ডের বিধান রয়েছে। এভাবে মাটি কাটায় একদিকে যেমন কৃষি জমি কমছে, অপরদিকে মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। আগামীতে ওইসব জমিতে ফলন কম ও উৎপাদন ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সচেতন কৃষকদের দাবী জমির উপরি ভাগের মাটি কাটা বন্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ণ কুমার সাহা জানান, কোন অবস্থাতেই জমির টপ সোয়েল বা ফসলি জমির মাটি কাটা যাবে না। কিছু সংখ্যক কৃষক অর্থের লোভের কারনে তাদের ফসলি জমির টব সোয়ের মাটি বিক্রি করে নিজেই নিজের ক্ষতি করছে।

















