হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি।র্যালি আলোচনাসভা ও দোয়া খায়েরসহ দিনব্যাপী নানা কর্মসুচির মধ্যদিয়ে দিনাজপুরের হিলি শত্রæমুক্ত দিবস পালন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা পৌরসভার আয়োজনে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় হিলি সীমান্তের চেকপোষ্ট গেট সংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অফিসের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষি করে মুহাড়াপাড়াস্থ সম্মুখসমরে গিয়ে শেষ হয়। পরে বেলুন উড়িয়ে দিবসের শুভসুচনা করা হয়। পরে সম্মুখসমরে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় ও নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দেয়া অনুষ্ঠিত হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাকক্ষে এক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা হিলি মুক্ত দিবসের স্মৃতি তুলে ধরেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অশোক বিক্রম চাকমা এর সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডা.শফিউল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদিন, লিয়াকত আলীসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সুধিজন উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্যঃ১৯৭১ সালের ১১ডিসেম্বর এই দিনে হিলি পাক হানাদার মুক্ত হয়। আজকের দিনে দিনাজপুরের হিলির মুহাড়াপাড়া এলাকায় বড়ধরণের সম্মুখযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল বলে দাবি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের। যুদ্ধ চলাকালীন এখানে প্রায় সাত হাজার পাক সেনা নিহত হয়। শহীদ হন প্রায় ১৩শ’ মুক্তিযোদ্ধা এবং মিত্র বাহিনীর ৩৪৫ জন সদস্য। আহত হন অনেকে। প্রচুর যুদ্ধের পর ১১ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের ৭ নম্বর সেক্টরের আওতায় দিনাজপুরের হিলি শত্রæমুক্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধে হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় গ্রামের মোস্তফা, একরাম উদ্দিন, বানিয়াল গ্রামের মুজিব উদ্দিন শেখ, ইসমাইলপুর গ্রামের মনির উদ্দিন, মমতাজ উদ্দিন, বৈগ্রামের ইয়াদ আলী ও চেংগ্রামের ওয়াসিম উদ্দিন শহীদ হন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন জানান, ১৯৭১ সালে দেশে যখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। বিশেষ করে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে স্পষ্ট হয়ে উঠে, যে কোনও মুহূর্তে পাকহানাদারদের সঙ্গে আমাদের সংঘর্ষ বাধতে পারে। এমতাবস্থায় সারাদেশের সঙ্গে হাকিমপুর তথা হিলি এলাকার নেতাদের আহŸানে সমাজসেবক খলিলুর রহমান ও ডা. আবুল কাশেমকে স্বেচ্ছাসেবক কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্কুল কলেজের উৎসাহী যুবক, আনসার ও মুজাহিদদের সমন্বয়ে বাংলা হিলি বালিকা বিদ্যালয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবক কমিটি গঠন করা হয়।
২৫ মার্চ পাকহানাদার বাহিনীর বর্বর হামলায় ঢাকা আক্রমণের পর পাকবাহিনীরা যাতে হাকিমপুরে প্রবেশ করতে না পারে সেই লক্ষ্যে হিলির স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যরা আগে থেকেই সড়কে গাছ কেটে ও রাস্তা খনন করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রতিরক্ষামূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে থানা ও ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস) ক্যাম্প থেকে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর কাছে ৩০৩টি রাইফেল হস্তান্তর করা হয়।
এ সময় তৃতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর নিজাম উদ্দিন ১৭টি গাড়িবহরসহ বেশ কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ফুলবাড়িতে এসে অবস্থান নেন এবং ওই স্বেচ্ছাসেবক দলকে হিলি ইপিআর ক্যাম্পের সুবেদার শুকুর আলীর নেতৃত্বে কয়েকজন ইপিআরকে বিহারী অধ্যুষিত পার্বতীপুরের হাবড়ায় খান সেনাদের প্রতিরোধ করার জন্য পাঠায়। এসময় সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে পাকহানাদারদের সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। প্রচুর শেলিং ও বিভিন্ন ধরনের গোলার আঘাতে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৯জন যোদ্ধা সেসময় শহীদ হন। নয় মাস যুদ্ধ শেষে ১১ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর সহযোগিতা ও মুক্তিবাহিনীর বীরত্বে হিলি শত্রæমুক্ত হয়।
















