আনোয়ার হোসেন আকাশ,
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:
তেত্রিশ বছর ধরে পিঁড়িতে বসে চুল কাটার কাজ করছেন ষাটোর্ধ্ব বয়সী সম্ভু শর্মা। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের হলদিবাড়ী বাজারের রাস্তার ধারে দেখা হয় তাঁর সঙ্গে প্রতিবেদকের। সাংবাদিক পরিচয় শুনেই নির্বিঘ্নে গড়গড় করে কথা বলা শুরু করলেন সম্ভু শর্মা। তিনি জানালেন তিনার জীবনে চলে যাওয়া দীর্ঘদিনের চুল কাটার অভিজ্ঞতার কথা।
সম্ভু শর্মার বাড়ি উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে। তিনি বলেন, ‘৩৩ বছর আগে এই হলদিবাড়ী বাজারে স্থায়ী কোনো দোকান ছিল না। সপ্তাহে মঙ্গলবার ও শুক্রবার এ দুদিন কয়েকজন ব্যবসায়ী পসরা সাজিয়ে জিনিসপত্র বিক্রি করত। তখন থেকে পিঁড়িতে বসে চুল ও দাড়ি কাটার কাজ করছি। তখন চুল কাটার দর ছিল ১০ পয়সা এবং দাড়ি কাটার দর ছিল ৫ পয়সা। এখন চুল কাটার দর ২০ টাকা এবং দাড়ি কাটার দর ১০ টাকা।
এখন প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেখতে দেখতে ৩৩টি বছর চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো বাজারের চিত্র বদলে গেলেও আমি এখনো বদলাইনি। একইভাবে সেই আগের মতই কাজ করে যাচ্ছি।’
সম্ভু শর্মা বলেন, ‘গেল পাঁচ বছর ধরে বাজারটি বড় হয়েছে। এখন সপ্তাহে দুদিন নয়, বরং ৭ দিনই বিকেল ৩টার পর থেকে ক্রেতাদের ভিড় থাকে। এ ভিড় থাকে রাত ৯টা পর্যন্ত। যদিও আমি অন্ধকার হলেই বন্ধ করে দিই চুল ও দাড়ি কাটার কাজ।’
সম্ভু শর্মার সংসারে তিন মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। দুই ছেলে তাঁর সঙ্গে নরসুন্দর পেশায় রয়েছেন। তবে তাঁরা মাটিতে নয়, সেলুনে কাজ করেন।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেলুনে চুল কাটার কাজ করার ইচ্ছা আছে কি ? এমন প্রশ্নের জবাবে সম্ভু শর্মা বলেন, ‘ পিঁড়িতে বসে কাজ করে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এখন চাইলেও আর সম্ভব নয়। জীবনের বাকি দিনগুলো এভাবেই কাজ করতে চাই।’
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নরসুন্দর উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মগেন শর্মা জানান, উপজেলায় প্রায় ৪০ জনের মতো বয়স্ক নরসুন্দর পিঁড়িতে বসে চুল ও দাড়ি কাটেন। যারা অল্প টাকায় চুল ও দাড়ি কাটেন।