পঞ্চগড় প্রতিনিধি\ পঞ্চগড়ে আহমদিয়া স¤প্রদায়ের সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভে পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় আরিফুর রহমানের (২৫) মরদেহ নিহত হওয়ার ১২৯ দিন পর ময়না তদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে গতকাল একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পুলিশ তড়িঘড়ি করে লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এর আগে ঘটনার ৯৪ দিন পর পঞ্চগড় থানার উপ পরিদর্শক ফরহাদ হোসেন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার প্রেক্ষিতে পঞ্চগড়ের সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম এম মাহবুব ইসলাম লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহত আরিফ পঞ্চগড় জেলা পৌরসভার ইসলামবাগ এলাকার ফরমান আলির একমাত্র ছেলে। গত ৩ মার্চ আরিফ স্থানীয় একটি মসজিদে জুমআর নামাজের পর পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের পাশে মসজিদপাড়া এলাকা থেকে অনেকের মত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল। এমন সময় পুলিশ-বিজিবির একটি দল রাবার বুলেট ও গুলি, টিয়ারশের নিক্ষেপ করতে করতে এগিয়ে আসে। এ সময় আরিফ গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুলিটি তার মাথার পেছনের অংশ দিয়ে প্রবেশ করে সামনের অংশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাঁকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজে রেফার্ড করেন। রংপুর নেয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই তার মৃত্যু হয়।
আরিফ নিহত হওয়ার পর পুলিশ আরিফকে শিবির কর্মী বলে দাবি করেন। স্বরাস্ট্রমন্ত্রীও গণমাধ্যমে আরিফকে শিবির কর্মী বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু আরিফ কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিল না বলে তার বাবা জানান। আরিফ দীর্ঘদিন প্রথম আলো বন্ধুসভার সাথে কাজ করতো। সর্বশেষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল।
নিহত আরিফের বাবা ফরমান আলী কবরস্থানের পাশে দাঁড়িয়ে জানান, আরিফের লাশ উত্তোলনের বিষয়টি তাঁকে জানানো হয়নি। তিনি বলেন, এলাকার মানুষের কাছ থেকে খবর পেয়ে লাশ উত্তোলন দেখতে এসেছি। তিনি বলেন, ঘটনার দিন গভীর রাতে পঞ্চগড় থানায় ইটপাটকেলের আঘাতে আরিফের মৃত্যু হয়েছে এবং কোন দাবি নাই এমন লেখা সম্বলিত কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে আরিফের লাশ ফেরত দেয়া হয়। পরদিন সকালে পঞ্চগড় পৌরসভার কেন্দ্রীয় কবরস্থানে জানাযা শেষে তাকে দাফন করা হয়। যেহেতু মামলা হয়েছে। পোস্টমর্টেম হচ্ছে সেহেতু আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। আমার ছেলে গুলিতেই মারা গেছে। গুলি মাথার পেছন দিক দিয়ে প্রবেশ করে সামনের অংশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। খবর পেয়ে আরিফের মা কবরস্থানে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি।
মামলার বাদি পঞ্চগড় থানার উপ পরিদর্শক ফরহাদ হোসেন জানান, আরিফ নিহত হওয়ার ঘটনায় বাদি হয়ে তিনি ঘটনার চার মাস ছয়দিন পর গত ৪ জুন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এতদিন পরে কেন হত্যা মামলা এমন প্রশ্নে তিনি ওসি সাহেবের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
পঞ্চগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ মিয়া জানান, মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে লাশ ময়না তদন্তের জন্য উত্তোলন করা হয়েছে। কৌশলগত কারণে অভিভাবকদের জানানো হয়নি। এতদিন পরে কেন হত্যা মামলা এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনিও।