সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে ১৪৫বছরের প্রাচীন দিনাজপুর পৌরসভা তার অতীত ঐতিহ্য আজ হারাতে বসেছে। দীর্ঘদিন ধরে কোন উন্নয়নমুলক কাজ না হওয়ায় রাস্তাগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দিনাজপুর পৌরসভার ১২২কিলোমিটার পাকা রাস্তার ৭৫শতাংশ ভাঙ্গাচোড়া, খানাখন্দ, খোয়া বিছানো অবস্থায় রয়েছে। যদিও ২বছর আগে সংস্কার কাজ শুরু হলেও ঠিকাদার ইটের খোয়া বিছিয়ে কাজ বন্ধ রেখেছে। এতে পথচারীসহ যানবাহন চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আর ভোগান্তি যেন কাটছেই না দিনাজপুর পৌরসভার নাগরিকদের।
দিনাজপুর পৌর এলাকায় মোট রাস্তার দৈর্ঘ্য ১৭৪দশমিক ৬৭কিলোমিটার। এরমধ্যে ১২২ কিলোমিটার পাকা আর কাঁচা রাস্তা ৫২দশমিক ৬৭ কিলোমিটার।
পৌর নাগরিকরা জানায়, শহরে কোনটি পাকা বা কোনটি কাঁচা রাস্তা বোঝার উপায় নাই। ৭৫শতাংশ সড়ক ভাঙ্গা চোরা, খানাখন্দক, খোয়া বিছানো অবস্থায় রয়েছে। পৌরসভার স্বাভাবিক কাজ ছাড়া তেমন কোন উন্নয়নমুলক কাজ না হওয়ায় রাস্তা, কালভাটের বেহাল দশা। এসব সড়কে পথচারীরা ইজিবাইক, রিক্সায় উঠতে ভয় পান। কারন ঝাকুনি আর ঝাকুনি। আবার প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা আর দুর্ভোগেই চলাচল করতে হচ্ছে পৌর নাগরিকদের। বছরের পর বছর উন্নয়নমুলক কাজ না হওয়ায় মেয়রের অযোগ্যতাকে দায়ী করলেন পৌরবাসী।
জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারন সম্পাদক রহমতুল্লাহ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, দেশের সবচেয়ে দুর্ভোগের শহর দিনাজপুর পৌরসভা। সড়কগুলোর বেহাল অবস্থার কারনে চলাচলও করা কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে।
সাবেক পৌর কাউন্সিলর ফয়সল হাবিব সুমন অভিযোগ করেন ২বছর আগে রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হলেও আজ পর্যন্ত শেষ হয়নি। ৭টি সড়ক সংস্কারের নামে ইটের খোয়া বিছিয়ে রাখা হয়েছে।
দিনাজপুর শহরের মডার্ন মোড় থেকে ঘাসিপাড়া-বালুয়াডাঙ্গা-পাটুয়াপাড়া-ক্ষেত্রীপাড়া-রামনগর-গোলাপবাগ, মিশনরোড, থানা মোড় হয়ে বড়বন্দর-ছোটগুড়গোলা-বড়গুড়গোলা-রাজাবাটী-মহারাজা স্কুলমোড়, সুইহারী মোড় থেকে কালুরমোড় হয়ে রাজবাটী-ফকিরপাড়া রাস্তা দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার হয়নি। মহল্লার অলিগলির রাস্তার অবস্থাও করুণ।
দিনাজপুর শহরের অটোরিকশা চালক ফারুক জানায়, খানাখন্দে ভরা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই তার অটোরিকশার কোনো না কোনো যন্ত্রাংশের সমস্যা হয়। চলাচলে সময়ও লাগে বেশি।
দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি রেজা হুমায়ুন কবির চৌধুরী শামিম বলেন, এক সময়ের শান্তির শহর দিনাজপুর এখন বসবাসের অযোগ্য। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফোরামে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি।
দিনাজপুর নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের সাধারন সম্পাদক হারুনর রশিদ জানান, সড়কগুলোর বেহাল অবস্থার কারনে গত ১৪মাসে ছোট-বড় দেড় শতাধিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। অনেকে পঙ্গুও হয়েছে।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মিনারুল ইসলাম জানান, কিছু কাজ চলমান রয়েছে, নতুন করে সাড়ে ৯ কোটি টাকা বরাদ্ব পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, ১৮৭৯সালে প্রতিষ্ঠিত দিনাজপুর পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে ২৬ দশমিক ৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৭২৭ জন মানুষের বসবাস।