বিভিন্ন জেলায় রাসেলস ভাইপারের বিচরণ ও এর কামড়ে আহত ও নিহত হওয়ার খবরে ইতোমধ্যে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে আতংক।আতংক থেকে বাদ পড়েনি দিনাজপুরও। তবে দিনাজপুরে রাসেলস ভাইপারের দেখা মিলায় বেড়েছে আতংক।
এদিকে দিনাজপুরে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিষধর সাপের কামড়ে প্রাণ হারিয়েছে ৩ নারী, আহত হয়েছে এক শিশু। দিনাজপুর সদর ও বিরলের দুটিস্থানে গত দুইমাসে এই রাসেলস ভাইপার তিনটির দেখা মিলে। কিন্তু এই নাম জানার আগে তাদের মেরে ফেলে স্থানীয়রা।
তবে ভয়ের কিছু নেই।এ জেলায় পর্যাপ্ত সাপের প্রতিষেধক মজুদ রয়েছে। কামড়ালে তাৎক্ষনিক নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্ষে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ স্বাস্থ্য বিভাগের।
রাসেলস ভাইপার সাপ যার বাংলাদেশী নাম চন্দ্রবোড়া। এখন দখল করে রেখেছে সোশ্যাল মিডিয়া। এই সাপের বিষ ও আক্রমণের গতি সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক চর্চা শুরু হওয়ায় অন্যান্য বিষধর সাপের চেয়ে তালিকায় পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে রাসেলস ভাইপার সাপের আতংক বেশি। বর্ষা শুরু হওয়ায় দিনাজপুরে বিভিন্ন প্রজাতির সাপের উৎপাত বেড়ে গেলেও রাসেলস ভাইপারের অস্তিত্ব পাওয়ায় সবার মাঝে আতংক। প্রায় দেড় বছর আগেও বিরল উপজেলায় একটি রাসেলস ভাইপার সাপ পাওয়া যায়। সেসময় তেমন আলোচনায় না থাকায় স্থানীরা বনবিভাগকে খবর দিলে বনবিভাগ সেটিকে উদ্ধার করে পরে বনে অবমুক্ত করে দেয়। তবে এবার ফেসবুকে আতংকের মাঝে দিনাজপুরের সদরের আস্করপুর ইউনিয়ন ও বিরল উপজলার দুটি ইউনিয়নে দুটি রাসেলস ভাইপার সাপের অস্তিুত্ব পেয়ে তাদের মেরে ফেলেছে স্থানীয় মানুষ। পরে মৃত সাপের ছবি ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। গত সপ্তাহে পরপর ৩দিন জেলার সেতাবগঞ্জ, বিরল ও ফুলাবড়ি উপজেলায় বিষধর সাপের কামড়ে প্রাণ হারিয়েছে ৩ নারী, আহত হয়েছে এক শিশু। তবে রাসেলস ভাইপার আতংকে মানুষের হাতে মারা পড়ছে অন্য প্রজাতির সাপ, এমনকি বিষ নেই এমন সাপও।
দিনাজপুর বনবিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক নুরুন্নাহার জানান, যে কোন বিষাক্ত সাপের নির্দিষ্ট সীমানায় গেলে বা বিরক্ত করলে ছোবল দেয়ার চেষ্টা করবে। রাসেলস ভাইপারের চেয়েও অনেক বিষাক্ত সাপ এ জেলায় রয়েছে। যাদের ছোবলে প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটে আসছে। তবে সাপ মেরে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট না করে সাবধানে চলার আহবান এই বনকর্মকর্তার।
জেলা সিভিল সার্জন ডা: এ এইচ এম বোরহান-উল-ইসলাম জানান, জেলায় পর্যাপ্ত সাপের প্রতিষেধক মজুদ রয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত এন্টি ¯œ্যাক ভেনম ৭৫৬টি ভায়াল মজুদ রয়েছে। গত ২৩ জুন আরও ৫০০ ভায়ালের চাহিদা প্রেরন করা হয়েছে। সাপে কাটার পর কোন ওঝা বা কবিরাজের শরনাপন্ন না হয়ে সরাসারি হাসপাতালে যাওয়ার পরমার্শ দিচ্ছেন। সাপ কামড়ালে তাৎক্ষনিক নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্ষে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন সিভিল সার্জন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বলছে, রাসেল ভাইপারের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে মানুষের সঙ্গে এই সাপের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই সাপ সাধারণত নীচু ভূমির ঘাস বন, ঝোঁপ জঙ্গল, উন্মুক্ত বন, কৃষি এলাকায় বাস করে এবং মানুষের বসতি এড়িয়ে চলে।
সাপটি মেটে রঙের হওয়ায় মাটির সাথে সহজে মিশে যেতে পারে। মানুষ খেয়াল না করে সাপের খুব কাছে গেলে সাপটি বিপদ দেখে ভয়ে আক্রমণ করে। রাসেলস ভাইপার দক্ষ সাঁতারু হওয়ায় নদীর স্রোতে ও বন্যার পানিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে। সকলকে সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
সাপের কামড় এড়াতে করণীয় সম্পর্কে জানানো হয়েছে, যেসব এলাকায় রাসেলস ভাইপার দেখা গিয়েছে, সেসব এলাকায় চলাচলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা, লম্বা ঘাস, ঝোঁপঝাড়, কৃষি এলাকায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকতে হবে, গর্তের মধ্যে হাত-পা ঢুকানো যাবে না।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকায় কাজ করার সময় বুট এবং লম্বা প্যান্ট পরতে হবে, রাতে চলাচলের সময় অবশ্যই টর্চ লাইট ব্যবহার করতে হবে, বাড়ীর চারপাশ পরিস্কার ও আবর্জনা মুক্ত রাখতে হবে, পতিত গাছ, জ্বালানী লাকড়ি, খড় সরানোর সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করা যাবে না এবং প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করে বা নিকটস্থ বনবিভাগের অফিসকে জানাতে হবে।
সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, দংশিত অঙ্গ নড়াচড়া করা যাবেনা। পায়ে দংশনে-বসে যেতে হবে, হাঁটা যাবেনা। হাতে দংশনে- হাত নড়াচাড়া করা যাবেনা। হাত পায়ের গিড়া নাড়াচাড়ায় মাংসপেশীর সংকোচনের ফলে বিষ দ্রুত রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে বিষক্রিয়া করতে পারে।
এতে আরো জানানো হয়, আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতো ভাবে ধুতে হবে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতো ভাবে মুছতে হবে, ঘড়ি বা অলঙ্কার বা তাবিজ, তাগা ইত্যাদি থাকলে খুলে ফেলতে হবে, দংশিত স্থানে কাঁটবেন না, সূই ফোটাবেন না, কিংবা কোনরকম প্রলেপ লাগাবেন না বা অন্য কিছু প্রয়োগ করা যাবেনা, সাপে কাটলে ওঝার কাছে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না, যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যেতে হবে,আতঙ্কিত হওয়া যাবে না, রাসেলস ভাইপারের বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
রাসেল’স ভাইপারের প্রাদুর্ভাব কমাতে করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, বেজি, গুইসাপ, বাগডাশ, গন্ধগোকুল, বনবিড়াল, মেছোবিড়াল, তিলানাগ ঈগল, সারস, মদনটাক এবং কিছু প্রজাতির সাপ ‘রাসেল’স ভাইপার’ খেয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এসকল বন্যপ্রাণীকে মানুষের নির্বিচারে হত্যার কারণে প্রকৃতিতে ‘রাসেলস ভাইপার’ বেড়ে যাচ্ছে। তাই বন্যপ্রাণী দেখলেই অকারণে তা হত্যা, এদের আবাসস্থল ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে হবে।