মঙ্গলবার , ৬ মে ২০২৫ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বাধীনতা পরবর্তী মহারাজা স্কুল মাইন ট্রাজেডী দিবসটির স্মৃতি রক্ষায় নির্মিত স্মৃতিসৌধ জাদুঘর আড়াই বছরেও চালু হয়নি

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
মে ৬, ২০২৫ ৯:৫১ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক বেদনাবিধুর মাইন বিস্ফোরন ট্র্যাজেডী দিবস ৬ জানুয়ারী। স্বাধনিতার অর্জনের কয়েকদিন পর ১৯৭২’র এই দিনে দিনাজপুরে এক আকষ্মিক মাইন বিস্ফোরণে শহীদ হন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ছিনিয়ে আনা ৫ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭২’র ৬ জানুয়ারী সন্ধ্যায় এই রুটিন ওয়ার্কের এক পর্যায়ে ঘটে যায় মাইন বিস্ফোরন দূর্ঘটনা,এতে শহীদ হন ৫শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা।
এসব শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষায় দিনাজপুর শহরের মহারাজা হাইস্কুল মাঠের ঘটনাস্থলেই একটি স্মৃতিসৌধ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে অযতœ অবহেলায় পড়ে থাকলেও নির্মাণের আড়াই বছরেও এটি চালু হয়নি।
স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মহারাজা স্কুল সংলগ্ন স্থানে ৬ জানুয়ারি শহীদদের উদ্দেশে ২০২০সালে স্মৃতিসৌধ জাদুঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রকল্প ‘মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ৬২ লাখ ৮ হাজার টাকা ব্যয়ে স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সূচনা ট্রেডার্স ২০২২সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ করে। ওই বছরই এটি মহারাজা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অন্যদিকে দিনাজপুর গণপূর্ত বিভাগ জানায়, স্মৃতির মিনারটির প্রাক্কলিত নির্মাণ ব্যয় ছিল ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
দিবসটি সম্পর্কে মহারাজা স্কুল মাইন বিস্ফোরণ ট্র্যাজেডি স্মৃতি পরিষদের আহŸায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল হক বলেন,পাকহানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে ১৯৭১সালের ১৬ডিসেম্বর শত্রæমুক্ত হওয়ায় দিনাজপুর শহরের উত্তর বালুবাড়ীর মহারাজা গিরিজানাথ হাই স্কুল মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ট্রানজিট ক্যাম্প বসানো হয়। ৬ ও ৭নং সেক্টরের প্রায় এক হাজার মুক্তিযোদ্ধা এখানে অবস্থান করেন। ভারতের হরিরাম, হামজাপুর, তরফপুর এবং বাংলাদেশের নবাবগঞ্জ, ফুলবাড়ী, পার্বতীপুর, হাকিমপুর, বিরামপুর, দিনাজপুর সদর, চিরিরবন্দর, ঠাকুরগাঁও হরিপুর, পীরগঞ্জ, বালিয়াডাঙ্গা ও রাণীশঙ্কৈল এলাকার যোদ্ধারা ১৬ থেকে ২০ডিসেম্বরের মধ্যে মহারাজা স্কুলের ট্রানজিট ক্যাম্পে অবস্থান নেন। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের মাটি দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় হানাদার বাহিনীর পুতে রাখা মাইন এবং ফেলে যাওয়া ও লুকিয়ে রাখা অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের কাজে ব্যস্ত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। প্রতিদিন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তল্ল¬াশি চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ট্রাকে করে পরিত্যক্ত অস্ত্রশস্ত্র মহারাজা স্কুলের ট্রানজিট ক্যাম্পের রক্ষণাগারে জমা করতেন। ৬ জানুয়ারী ১৯৭২সাল। ঘোড়াঘাট থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধারকৃত পরিত্যক্ত অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ বোঝাই দুটি ট্র্রাক আসে বিকেল ৪টায়। শুরু হয় ট্রাক থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ খালাসের কাজ। সোয়া ৫টার দিকে প্রথম ট্রাকের অস্ত্র নামানোর কাজ শেষ হয়। তারপর শুরু হয় দ্বিতীয় ট্রাকটির অস্ত্র নামানোর কাজ। ট্রাক থেকে বাংকারে অস্ত্র নামানোর সময় একজনের হাত থেকে অসাবধানতা বশত কয়েকটি পারসোনাল মাইন মাটিতে পড়ে গেলে মারাতœক ও হৃদয়বিদারক দূর্ঘটনার সৃষ্টি হয়। মুহুর্তের মধ্যে বাঙ্কারে মজুদকৃত বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। প্রায় ১৫ থেকে ২৫ ফুট গভীর বিরাট বাঙ্কারটির আশপাশ ফাকা জায়গাটি পুকুরে পরিনত হয়। দূর্ঘটনা সময় অদুরে টিনের ছাপড়ার মসজিদে মাগরিবের সামাজ আদায়কারী সকল মুসলিল্ল ও দূর্ঘটনা থেকে ১৫০গজ অদুরে মহারাজা স্কুলের ১৩টি কক্ষ অবস্থানরত অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা এ মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় নিহত হয়। তৎকালীন মহারাজার আমলে নির্মিত এই স্কুল ভবন মাইন বিস্ফোরণে দুমড়ে-মুচড়ে কাগজের মতো হয়ে যায়। ভয়াবহ এ মাইন বিস্ফোরনে কতজনের নিমর্ম মৃত্যু হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা আজও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। শুধু মুক্তিযোদ্ধাই নয়, এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় উত্তর বালুবাড়ী কুমার পাড়া এলাকার আরো ১৫জন অমুক্তিযোদ্ধাও মৃত্যুবরণ করেন। ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয় মহারাজা স্কুলের দ্বিতল ভবনসহ আশেপাশের অধিকাংশ ঘর-বাড়ী, দালান-কোঠা। দূর্ঘটনার পরদিন ৭ জানুয়ারী দিনাজপুর গোরা শহীদ ময়দানে শহীদদের নামাজের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। চেহেলগাজী মাজার প্রাঙ্গণে আরও দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য,১৯৮৮সাল থেকে ৬ জানুয়ারি মাইন বিস্ফোরণ ট্র্যাজেডি দিবস হিসেবে ৬ জানুয়ারী স্মৃতি পরিষদ, দিনাজপুর’ বিভিন্ন কর্মসুচী পালন করে আসছে। কর্মসূচীর মধ্যে থাকে, চেহেলগাজী মাজারে শহীদদের গণকবর ও মহারাজা স্কুল প্রাঙ্গনে শহীদদের নামফলকে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পন, আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং মহারাজা স্কুল মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। মর্মান্তিক সেই দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্কুল প্রাঙ্গণে ১২০জনের এবং চেহেলগাজী সমাধিস্থলে ১৭৭জনের নামফলক নির্মিত হয়।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও

আপনার জন্য নির্বাচিত

প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের আয়োজনে বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান

পবিত্র আশুরা ২০ আগস্ট

বিরামপুরে বিদ্যালয়ে দুর্বৃত্তদের আগুন, পুড়ে ছাই অফিস কক্ষের নথিপত্র

দিনাজপুরে দাড়িয়ে থাকা ভুট্টা বোঝাই ট্রাকে আগুন দিল দুর্বৃত্তরা

স্বামীকে হাসিমুখে বিদায় দিয়ে স্ত্রীর আত্মহত্যা..

বিরলে চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন

বীরগঞ্জে দ্রুত বিচার আইনে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ফুলিসহ আটক ২

বীরগঞ্জ পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত দিবস ও স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী পালন উপলক্ষ্যে প্রস্ততিমূলক সভা

ড. এম. এ. ওয়াজেদ মিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রবেশমুখে ঠাকুরগাঁওয়ে ৩ ভেন্ট বিশিষ্ট কালভার্ট ও সংযোগ সড়ক উদ্বোধন

বীরগঞ্জে ওয়ার্ল্ড ভিশনের উদ্যোগে ৪টি ইউনিয়নের গ্রামকে বাল্যবিবাহ মুক্ত ঘোষণা