দিনাজপুর প্রতিনিধি \
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির স্বাস্থ্যসেবায় প্রায় দেড় যুগ পার করলেও এখনও কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না রোগীরা। হাসপাতালের শয্যা ৫০০ হলেও প্রতিদিন গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন ৯০০ থেকে ১১০০জন। বহির্বিভাগেও প্রতিদিন সেবা নেন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত সহস্রাধিক শিশু-নারী-পুরুষ। বর্তমানে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট,নষ্ট যন্ত্রপাতি,দালালদের দৌরাত্ম্য রয়েছে।হাসপাতালের সীমাবদ্ধতার এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সুফল নিচ্ছে মেডিকেলের সামনে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ বেসরকারি হাসপাতালগুলো। এতে চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন রোগী ও তাঁর স্বজনেরা। ফলে রোগীদের অসন্তোষ ও ভোগান্তি বেড়েছে।
তবে দালালদের দৌড়াত্ম কমাতে শিঘ্রই অভিযান চালানো হবে বলে জানান দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এ টি এম নুরুজ্জামান।
হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিমিউ অ্যান্ড টিসি বিভাগে হাসপাতালে অচল-সচল ও মেরামতযোগ্য যন্ত্রপাতির তথ্য পাঠিয়েছে। হাসপাতালের ৫৫৫টি যন্ত্রের মধ্যে ২৫৭টি অচল। অচল যন্ত্রের মধ্যে এমআরআই ও সিটি স্ক্যান ছাড়াও রয়েছে পালস অক্সিমিটারের মতো ছোট যন্ত্রও।এমআরআই যন্ত্র দীর্ঘদিন অচল থাকায় প্রিন্টার, কম্পিউটারসহ অন্য ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশগুলো নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। পাশের কক্ষে সিটি স্ক্যান যন্ত্রটি নষ্ট ছিল প্রায় দুই বছর। স¤প্রতি মেরামত করা হয়েছে। তবে ফিল্ম না থাকায় সিটি স্ক্যান বন্ধ।
কয়েকজন কর্মচারী-চিকিৎসক-নার্স জানান, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে কিছু প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাম ছাড়া অন্য কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না।প্রায় ২৪ঘণ্টা হাসপাতালের করিডর ও ওয়ার্ডে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধিরা থাকেন। কতিপয় ওয়ার্ড বয়ের সহযোগিতা নিয়ে রোগীদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান এই প্রতিনিধিরা। বেসরকারি হাসপাতালে প্রতি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সরকারি হাসপাতালের চেয়ে কমপক্ষে ২০-৪০শতাংশ অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয় রোগীদের। এছাড়া কিছু চিকিৎসকও রয়েছেন, যাঁরা সংশ্লিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরামর্শ দেন রোগীদের।
হাসপাতালের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী চিকিৎসকদের অনুমোদিত পদ ২১২টি। এখানে কর্মরত আছেন ১২০জন।এছাড়া দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির ১৩৩পদের বিপরীতে ৬৫টি পদ শূন্য রয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ৫ক্যাটাগরিতে আউটসোর্সিং কর্মচারী ২৩৬জন। কিন্তু বর্তমানে আউটসোর্সিং কর্মচারী রয়েছেন ৩৮৮জন। তাঁদের বেতন ধরা হয়েছে মাসে সাড়ে ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার। গালফ সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড মাসিক দেড় লাখ টাকা কমিশনে এই জনবল সরবরাহ করে। ২৩৬ জনের বেতন ৩৮৮জনের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এ টি এম নুরুজ্জামান জানান,চিকিৎসকসহ জনবল সংকট রয়েছে। চিকিৎসকদের অনুমোদিত পদ ২১২টি। সেখানে কর্মরত আছেন ১২০জন। প্রায় এক যুগ ধরে হাসপাতালের এমআরআই যন্ত্রটি পুরোপুরি অচল হয়ে রয়েছে। স¤প্রতি সিটি স্ক্যান যন্ত্রটি মেরামত করা হয়েছে। তবে ফিল্মের কারণে এক্স-রে, সিটিস্ক্যান বন্ধ রয়েছে। নতুন দরপত্র গৃহীত এবং অনুমোদন হলে ফিল্ম পাওয়া যাবে। শিঘ্রই চালু হবে। এরই মধ্যে হাসপাতালের অচল যন্ত্রপাতির তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালের নির্ধারিত শয্যার চেয়ে দ্বিগুণ রোগী থাকে। হাসপাতালের চতুর্থ তলা স¤প্রসারণের কাজ চলছে। গণপূর্ত বিভাগ এটি হস্তান্তর করলে শয্যাসংকট কেটে যাবে। তবে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট ও অচল যন্ত্রপাতি চালু করা গেলে রোগীদের কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করতে পারবো। এরপরেও প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া চেষ্ঠা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯২সালে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের যাত্রা শুরু।পরে ৫০০শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ হলে ২০০৬ সালে শুরু হয় স্বাস্থ্যসেবা।