চিরিরবন্দর প্রতিনিধি \ গৌরব-অহঙ্কারের বিজয়ের মাসে স্মৃতিপটে ভেসে উঠে সেই বেদনাবিধুর দিনের কথা। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকসেনা আর তাদের দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস্ বাহিনীর হাতে নিহত ব্যক্তিদের যেখানে গণকবর দেয়া হয়েছে, সেখানে দেয়া গণকবর বা বধ্যভূমিগুলো চরম অযতœ, অবহেলায় রয়েছে। এসব গণকবরের কোনটির সীমানা প্রাচীর কোনটির স্মৃতিস্তম্ভ না থাকায় দেখভালের অভাবে গোচারণ ভূমিতেও পরিণত হয়েছে।
চিরিরবন্দরের আলোকডিহি ইউপির আলোকডিহি জে,বি উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে, চিরিরবন্দরের রেলব্রীজ এলাকায, ইসবপুর ইউপির কামারপাড়া-নওখৈর, আব্দুলপুর ইউপির বানিয়াজুগি, পুনট্টি ইউপির ভেলামতি নদীর তীরে, তেঁতুলিয়া ইউপির বেলান নদীর তীরে গণকবর রয়েছে বলে জানান সাবেক চিরিরবন্দর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মমিনুল ইসলাম শাহ্। এসব গণকবরের মধ্যে শুধুমাত্র আলোকডিহি জে, বি উচ্চ বিদ্যালয়ের গণকবরটিতে সীমানা প্রাচীর এবং মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের নাম ও ঠিকানা সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। তবে বর্তমানে জরাজীর্ণ হয়ে রয়েছে।
আলোকডিহির গণকবর খননকারীরা হলেন-দক্ষিণ আলোকডিহি গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মৃত হযরত আলীর পুত্র মো.আ. জব্বার শাহ্, মৃত কোফারত আলীর পুত্র মো. ইছাহাক আলী, ঘুটু ফকির, মনজের আলী, মজিবর রহমান, বদিউজ্জামান ওরফে বদি এবং সাতনালা গ্রামের মৃত মফিজউদ্দিনের পুত্র এবং ইছাহাক আলীর শ্যালক মো. মোজাম্মেল হক। এসব গণকবর বা বধ্যভূমি খননকারীদের মধ্যে অনেকে বেঁচে থাকলেও বদিউজ্জামান ওরফে বদি বেঁচে নেই। তাঁকেও পাকসেনারা নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।
গণকবর খননকারী আ.জব্বার শাহ্ (৭৫), ইছাহাক আলী (৭৮), মনজের আলী (৭২) সেই বিভিীষিকাময় দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে চোখের অশ্রæ সংবরণ করতে পারেননি। তাঁরা জানান-১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে পাকবাহিনী আর তাদের দোসর রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা তাদের উপর চালায় অকথ্য নির্যাতন-নিপীড়ন। তাঁদেরকেই নয়-চারদিক থেকে ধরে আনেন আরো প্রায় আড়াই শতাধিক ব্যক্তিকে। তাদের উপরও চলে নির্যাতন-নিপীড়ন। অন্যান্য লোকজনের মত তাদেরকেও ধরে এনে আলোকডিহির পাকসেনা ক্যাম্পে আটক করে রাখে। তারপরেও ক্ষান্ত হননি পাক হায়েনারা।চোখের সামনেই প্রায় ১৭/১৮জনকে গুলি করে হত্যা করে পাকবাহিনীর সদস্যরা। অত্যাচার-নিপীড়ন করার পড়েও তাদেরকে দিয়েই পাকবাহিনীর সদস্যরা খনন করে নেন কবর, সমাধিস্থ করে নেন লাশগুলোর। শহীদেরা বেঁচে আছেন তাদের আপনজনদের স্মৃতিসৌঁধে।
এসব বধ্যভূমির সংরক্ষণ বিষয়ে সাবেক চিরিরবন্দর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মমিনুল ইসলাম শাহ্ জানান, ইউএনও’র মাধ্যমে সরকারের নিকট অনেকবার আবেদন করেছি কিন্তু কোন কার্যকর উদ্যোগ নেই। শহীদ পরিবারগুলো বুকভরা আশা নিয়ে অপেক্ষায় আছে। কবে বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করা হবে? শহীদের স্মরণে নির্মিত হবে স্মৃতিস্তম্ভ ? আলোকডিহি ছাড়া বাকী বধ্যভূমিগুলোতে নেই কোন সাইনবোর্ড, সীমানা প্রাচীর কিংবা ঘেরা।