উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠ দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দানে পবিত্র ঈদ-উল আযহার নামাজের সকল প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। আবারও লাখো লাখো মুসল্লির পদভারে মুখরিত হবে। নেয়া হয়েছে কয়েক স্তরের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আগামী বৃহস্পতিবার ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল আযহার জামাতে অংশগ্রহনের জন্য দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলা ও বাইরের জেলা থেকে ধর্মপ্রান মুসুল্লিদের সুবিধার্থে প্রথমবারের মত দুটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। ঈদুল আযহার নামাজে ইমামতি করেন ইমাম মাওলানা সামশুল হক কাশেমী।
ইতোমধ্যে হুইপ ইকবালুর রহিম জানিয়েছেন, বাইরের জেলা থেকে মুসুল্লিরা যেন জামাতে নামায আদায় করতে পারেন এজন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদ উল আযহার দিনে ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিদের জন্য পঞ্চগড় থেকে দিনাজপুর এবং পার্বতীপুর থেকে দিনাজপুর বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে।মঙ্গলবার বিকালে তিনি গোর-এ শহীদ ময়দানে নামাজের জন্য মাঠের প্রস্ততি দেখতে পরিদর্শন করেন। এসময় জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদসহ বিভিন্ন প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
রেল সুত্র জানায়, পার্শবর্তী এলাকার মুসল্লীেেদর ঈদের নামাজ আদায়ের সুবিধার্তে ঈদ উল আযহা উপলক্ষে দুটি স্পেশাল ট্রের চলাচল করবে। প্রথমবারের মত ট্রেন দুটি ঠাকুরগাও-দিনাজপুর-ঠাকুরগাও এবং পার্বতীপুর-দিনাজপুর-পার্বতীপুর রুটে চলাচল করবে। ঈদের দিন গোর-এ শহীদ ঈদগাহ স্পেশাল-১ ট্রেনটি ঠাকুরগাও স্টেশন থেকে সকাল ৫টায় ছেড়ে এসে দিনাজপুরে পৌছবে সকাল সোয়া ৭টায় এবং নামাজ শেষে একই রুটে দিনাজপুর স্টেশন থেকে সাড়ে ৯টায় ফিরে যাবে। এই রুটে শিবগঞ্জ, পীরগঞ্জ, সেতাবগঞ্জ, মঙ্গলপুর ও কাঞ্চন জং স্টেশনে যাত্রা বিরতি থাকবে। অপরদিকে গোর-এ শহীদ ঈদগাহ স্পেশাল-২ ট্রেনটি পার্বতীপুর থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে এসে দিনাজপুরে পৌছবেসকাল পৌনে সাত টায় এবং একই রুটে নামাজ শেষে দিনাজপুর স্টেশন থেকে সোয়া ৯টায় ফিরে যাবে।এই রুটে মন্মথপুর, চিরিরবন্দর ও কাউগাঁও স্টেশনে যাত্রা বিরতি থাকবে।
আয়োজকরা জানায়, ঈদের দিন সকাল ৭টা থেকে মুসুল্লিরা মাঠের প্রবেশ পথ দিয়ে আসবেন। মোট ১৭টি গেট মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে জায়নামায ও ছাতা নিয়ে প্রবেশ করবেন মুসুল্লিরা। থাকবে পর্যবেক্ষন টাওয়ার। ৩০টি সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হবে। ১১০টি মাইক বসানো ছাড়াও ইমাম সাহেবকে সহযোগিতা করতে বিভিন্ন মসজিদ এবং মাদ্রাসা থেকে ১৫০ মুক্কাবির নিয়োজিত থাকবেন। থাকবে স্বাস্থ্য ক্যাম্প। ওজু করতে ২৫০টি ওযুখানা এবং পানি খাবার ব্যবস্থা রাখা হবে।
এদিকে, দেশের বৃহৎ এ ঈদ জামাতকে ঘিরে নেয়া হয়েছে কয়েক স্তরের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন থাকবে র্যাব ও আনসার বাহিনী। থাকছে ঈদগাহের মাঝে র্যাবের ওয়াচ টাওয়ার, প্রবেশের পূর্বে মুসল্লিদের আনা যানবাহন রাখার তিনটি পয়েন্টে চেকিং ব্যবস্থা। মাঠে মেটাল ডিটেক্টরে তল্লাশির পর প্রবেশ করানো হবে মুসল্লিদের। এ ছাড়া মাঠে প্রবেশের বিভিন্ন পথে টহল পুলিশ ছাড়াও সাদা পোষাকে এবং পুলিশ ছাড়াও র্যাবসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীরাও নিরাপত্তায় সক্রিয় দায়িত্ব পালন করে। ঈদ জামাতটি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে।
উল্লেখ্য, দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ২০১৭ সালে নির্মিত ৫২ গম্বুজের এ ঈদগাহ মিনার। এই ৫০ গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাবের (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) উচ্চতা ৪৭ ফুট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ফুট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। পুরো মিনার সিরামিক্স ইট দিয়ে আচ্ছাদিত। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলেই ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে ওঠে। ২০১৭সাল থেকে প্রতিবছর এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। দিনাজপুর ঐতিহাসিক গোরে শহীদ বড় ময়দানে এবার নবম বারের মত ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই গোর-এ শহীদ মযদানে একসঙ্গে ১০লাখ মানুষ ঈদের জামাত আদায় করতে পারার ব্যবস্থা রয়েছে।উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই। এছাড়াও পর্যটকদের কাছেও এটি দর্শনীয়। 

                    







                                    


                                            




