বিরল (দিনাজপুর) প্রতিনিধি ঃ আজ ১৩ ডিসেম্বর বহলা ট্রাজেডী দিবস। এই দিনটির কথা মনে হলে এখনোও বহলাসহ আশ-পাশ গ্রামের লোকজনদের শরীর শিউরে উঠে।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার প্রায় জেলা শহর লাগোয়া কাঞ্চন রেল ব্রীজের দক্ষিণে বিজোড়া ইউপি’র দক্ষিণ বহলা গ্রাম।
৭১-এর ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যার সময় পুরো পাড়াটাই ঘিরে ফেলে পাকহানাদার বাহিনীর সদস্য ও তাদের দোসররা। তারা প্রস্তাব দেয় সে গ্রামে খাঁনদের ক্যাম্প স্থাপন করার। এ সময় গ্রামের সাধারণ মানুষেরা আপত্তি তুললে মহুর্তে যা ঘটার তা ঘটে যায়। গ্রামের নিরীহ মানুষেরা খাঁনসেনা ও তাঁদের দোসরদের কাছে মাগরিবের নামাজ আদায়ের আকুতি করলে তাঁরা নামাজের জন্য সবাইকে সারিবদ্ধ হতে বলে। এসময় সকলে নামাজে দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করতে করতে মাত্র দু’ রাকাত নামাজ শেষ করার সাথে সাথে পাক হানাদার বাহীনি এবং তাদের দোসররা এসকল সাধারণ মানুষকে সারিবদ্ধ করে ব্রাশ ফায়ার করে। এতে ৩৯ জন নীরিহ মানুষের জীবন প্রদীপ চিরতরে নিভে যায়। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ছটফট করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তারা। পাকসেনা ও তাদের দোসাররা রক্তে রক্তাক্ত লাশ গুলির স্তুপ করে দিয়ে চলে যায়। টানা ৩ দিন পর অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর বিকালে পোঁচন ধরা লাশ গুলিকে পাশে একটি গণকবরে একই সাথে ৩৩ জনকে সমাহিত করা হয়। তাঁরা হলেনঃ সাহের উদ্দিন, খমির উদ্দিন, ওহাব আলী, মছলে উদ্দিন, সফিউদ্দিন, আব্দুস সাত্তার, আব্দুর রহমান, ভুতা মোহাম্মদ, কালু মোহাম্মদ, জাহের উদ্দিন, আখি মোহাম্মদ, টাকরু, তসির উদ্দিন, নুরু মোহাম্মদ, সামির উদ্দিন,আব্দুল লতিফ, ছপি উদ্দিন, রবিতুল্যাহ, আকবর আলী, আমিন আলী, মুন্সি আঃ জব্বার, ইসাহাক আলী, মহসীন আলী (চেন্দেরু), জয়নাল আবেদীন, বারেক তুল্যা, রহিম উদ্দিন, গোলাম মোস্তফা (গলো), আঃ করিম আলী, সোহরাব আলী, মোস্তাফা (মনু), ওমর আলী, মুজিতুল্যাহ, আছির উদ্দিন। বাকি ৬ জনঃ ফজলু, খেতু বোড়াল, খলিল উদ্দিন, জাহের মোহাম্মদ, রহিমুদ্দিন, আঃ মালেকের লাশ পারিবারিকভাবে দাফন করা হয় গ্রামের অন্য জায়গায়।
দিবসটিকে ঘিরে ১৩ ডিসেম্বর সকালে স্মৃতিস্তম্ভ চত্বরে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া খায়ের ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।