দিনাজপুরের রানীবন্দরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র পোশাক কারখানা। যা গ্রামীন অর্থনীতিকে করছে শক্তিশালী। পাশাপাশি হয়েছে কয়েকশ মানুষের কর্মসংস্থান। এসব পোশাক কারখানায় সারা বছরই থাকে কাজ। তবে গরমের চেয়ে এখানকার তৈরী শীতের পোশাকের চাহিদা বেশী। কেবল শীত মওসুমে এবার ১০কোটি টাকার বেচা-কেনার আশা করছেন ক্ষুদ্র পোশাক ব্যবসায়ীরা।
রাজধানী ঢাকা থেকে কাপড়সহ অন্যান্য কাঁচামাল এনে পোশাক তৈরি করেন ক্ষুদ্র পোশাক শিল্পের সাথে জড়িতরা। এখানকার তৈরী পোশাক সরবরাহ করা হয় নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারী বাজারে। এসব কারখানায় শ্রমিকদের তৈরী পোশাকগুলোতে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় ডিজাইন আর মেশিনে সেলাই এবং হাতের কাজে এখানকার সুনাম রয়েছে।
তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও স্বল্প সুদে ঋণ পেলে এসব ক্ষুদ্র কারখানার পরিধি বেড়ে পোশাক শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় হয়ে উঠতে পারে এবং বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। অঞ্চলটি হয়ে উঠতে পারে সম্ভাবনাময় পোশাক তৈরীর গ্রামীন শিল্প এলাকা। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখতে পারবে। এমনটাই বললেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন বিভিন্ন কারখানায় দেখা যায়, ক্ষুদ্র পোশাক কারখানাগুলোতে সেলাই মেশিনের শব্দই বলে দিচ্ছে শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা। সব বয়সের মানুষের জন্য শীতবস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন কারিগররা। শিশুদের বাহারি ডিজাইনের জ্যাকেট থেকে শুরু করে মেয়েদের হাল ফ্যাশনের শীতের পোশাকও তৈরি হচ্ছে। যা শোভা পাচ্ছে দেশের বিভিন্ন শো-রুমে।এসব কারখানায় কেউ কাপড় কাটছেন, কেউবা মেশিনে সেলাই করছেন। আবার কেউ কাজ শেষে বোতাম ও চেইন লাগাচ্ছেন। কেউবা তৈরি পোশাক ক্যালেন্ডার বা করা হচ্ছে অ্যাম্ব্রয়ডারির কাজ। চাহিদানুযায়ী এসব পোশাক তৈরি করছেন তারা।
শীত মৌসুমকে ঘিরে কারখানাগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে।চিরিরবন্দরের রানীরবন্দরের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠেছে প্রায় ২০টি মিনি গার্মেন্টস। মুসলমানদের দুই ঈদ, শীত মৌসুম এবং গরমের উপর নির্ভর করে তৈরি করেন ক্ষুদ্র পোশাক শিল্পের সাথে জড়িতরা।
এসব কারখানায় একজন শ্রমিক দৈনিক ৮-১০টি জ্যাকেট তৈরি করতে পারেন। এতে তারা দৈনিক ৮শ’-১হাজার টাকা আয় করেন। একজন দক্ষ শ্রমিক প্রতিমাসে ২৫-৩০হাজার টাকা আয় করতে পারেন। অনেক নারী শ্রমিক বাড়ীতে বসেও এই কাজ করে আয় করছেন। শীতের পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রমিকরাও ভালো মজুরি পান।
রানীরবন্দরে সুমাইয়া গার্মেন্টস ও মা গার্মেন্টসে পলাশ মহন্ত, মনির হোসেন, অহিদুল ইসলাম ও আনোয়ারসহ একাধিক শ্রমিক জানায়, শীতবস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত। বর্তমানে শার্ট-প্যান্ট, রেডিমেট শার্টসহ অন্যান্য পোশাক তৈরি ছেড়ে দিয়ে শীতের পোশাক তৈরি করছেন।
সুমাইয়া গার্মেন্টসের সত্ত¡াধিকারী মো. শাহজাহান আলী ও মা গার্মেন্টসের সত্ত¡াধিকারী মো. আতিয়ার রহমান জানান, সময় মতো শীতবস্ত্র মার্কেটে পৌঁছানোর জন্য এত ব্যস্ততা। বিভিন্ন কারখানায় বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি কাপড়ে শীতবস্ত্র তৈরি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা শীতবস্ত্র ক্রয় করতে আসছেন। এই শীত মৌসুমে রানীরবন্দর থেকে পাইকারী দৈনিক ৮-১০লাখ টাকার শীতবস্ত্র বিক্রি হচ্ছে। এ মৌসুমে প্রায় ১০কোটি টাকার কেনাবেচা হবে বলে আশা করছেন।