আপেল মাহমুদ, রুহিয়া ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতাঃ আমাদের এক শতক জমি নাই। তাই এই গুচ্ছগ্রামে থাকি। যুদ্ধের সময় যারা দেশের সাথে বেঈমানি করছে, যে রাজাকাররা দেশের মানুষকে দিনে-দুপুরে জবাই করছে, মা-বোনের ইজ্জত নিছে, তারা আজকে অনেক অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছে। তাদের কেউ আমাদের মতো গুচ্ছগ্রামে মানবেতর জীবনযাপন করে না। এই কি মুক্তিযোদ্ধার পুরস্কার? এ জন্য কি দেশটাকে স্বাধীন করেছিল? স্বাধীনতাযুদ্ধে জয়ী হলেও জীবনযুদ্ধে পরাজয়ের বেদনা, হতাশা আর হাহাকার নিয়ে কথা গুলো বলছিলেন মর্জিনা বেগম মুক্তিযোদ্ধা মৃত, ইয়াসিন আলীর স্ত্রী। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া থানাধীন ভেলারহাট আশ্রয়ণ প্রকল্পে (গুচ্ছগ্রাম) এখন বাস ৬৫ বছর বয়সী এই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর। স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বছর গোটা দেশ যখন বিজয় উদযাপন করছে, তখন একজন মৃত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী বলছেন, মুক্তিযুদ্ধ করেছিল বলে সরকার থেকে মাসে টাকা দেয়। আমার ওষুধ কিনতে তো সে টাকা শেষ হয়ে যায়। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। ২০০১ সালে ভেলারহাট আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১নং বেরাকে মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইয়াসিন আলীকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পই মৃত্যু হয় মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইয়াসিন আলীর। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইয়াসিন আলী রুহিয়া থানাধীন ২নং আখানগর ইউনিয়ন কমান্ডারের দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। তার স্ত্রী মর্জিনা বেগমের কাজ করার শক্তি নেই। বেশিরভাগ সময়ই এখন কাটে আশ্রয়ণ প্রকল্পের খুপড়ি ঘরে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তবে দারিদ্রতা পিছু ছাড়েনি মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলীর পরিবারের। একমাত্র ছেলে মোঃ মশিউর রহমান। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছোট ঘরে থাকার জায়গা হয় না। তাই স্ত্রী, সন্তান, নাতি-পুতি নিয়ে ঘর বেঁধেছেন সরকারি পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে। যে কোন সময় উচ্ছেদের ভয়ে দিন কাটে তার। মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইয়াসিন আলীর স্ত্রী মর্জিনা বেগম জানান, ২০০১ সাল থেকে আশ্রায়ণে থাকি। আজ পর্যন্ত আশ্রায়ণের কোন কাজ হয়নি, বৃষ্টি হলে ঘরে থাকা যায়না পানি পড়ে, টয়লেট নাই। আশ্রায়ণে মানবেতর জীবনযাপন করছি। মুক্তিযোদ্ধার যে ভাতা পাই, তা দিয়ে ওষুধ ঠিকমতো কিনতে পারি না। তিনি আরো বলেন, ‘রক্ত ঝরলো, যুদ্ধ শেষ হলো। অভাব তবু শেষ হলো না।’ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলীর স্ত্রীর প্রশ্ন, ‘আমাদের দুঃখ-কষ্টের দিন কি কখনও শেষ হবে?’ প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন মাথা গুযার জন্য নিরাপদ আশ্রয় ও পরিবারে একটি চাকরি চাই। স্থানীয়রা বলছেন, স্বাধীনতার এতো যুগ অতিবাহিত হওয়ার পরেও যখন জাতি হিসেবে আমাদের এমন অবস্থা দেখতে হয় এজন্যও জাতি হিসেবে আমাদের ক্ষুব্ধতার সাথে লজ্জিত হতে হয়। হত-দ্ররিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার যেন একটু ভালো ভাবে বেঁচে থাকতে পারেন সে জন্য স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ প্রশাসনের আশু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আখানগর ইউনিটের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ তছলীম উদ্দিন বলেন, ‘কতটা অসহায় হলে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকতে হয়, তা সচেতন মানুষ সহজে বুঝতে পারবেন। আশা করছি, ভেলারহাট আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের দিকে সরকার সুদৃষ্টি দেবেন।