বিকাশ ঘোষ,
বীরগঞ্জ(দিনাজপুর)প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বীরগঞ্জে চাকরিজীবী থেকে শুরু করে শ্রমজীবী মানুষ কেউই স্বস্তিতে নেই। প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করেও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাদাম বিক্রেতা হযরত ও মোস্তফা। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন খেটে-খাওয়া মানুষগুলো।
তারা বলছেন, এভাবে নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
প্রতিটি জিনিসের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে করে পরিবারের সদস্যদের জন্য তিন বেলা পরিমাণ মতো খাবার জোটানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ওষুধ থেকে শুরু করে লবণ পর্যন্ত- এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে দুই তিন গুণ বাড়েনি।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে উপজেলা সদরের দিনাজপুর বাসস্ট্যান্ডে বাদাম বিক্রি করতেন আসা উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের কালিনগর এলাকার মৃত ইসরায়েল হোসেনের ছেলে বাদাম বিক্রেতা হযরত আলীর তিন ছেলে -মেয়ে এবং নিয়ে ৫ জনের সংসার তার। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বাদামের ডালি ঘাড়ে নিয়ে পৌরশহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করে তিন থেকে সাড়ে তিনশত টাকা রোজগার দিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্টের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আগে তিনি ৫ থেকে ৬ কেজি বাদাম বিক্রি করতেন। বর্তমানে ৩ থেকে ৪ কেজি বাদাম বিক্রি করছেন। এতে সারাদিন ঘুরেফিরে করেও চলছে না সংসার। অনদিকে
নিজপাড়া দমুখার বাজার এলাকার আরেক বাদাম বিক্রেতা মৃত, মকবুল হোসেনের ছেলে মোঃ গোলাম মোস্তফা দীর্ঘ ২০ বছর যাবত চিনা বাদাম, চালভাজ ও বুট বিক্রি করেন তিনি। তিনি জানান,দুই ছেলে আর এক মেয়েসহ পাঁচজনে সংসার তার। তিনি আরও জানান, বাদামসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বর্তমানে
এক কেজি বাদাম কিনতে হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি। তা ভেজে বিক্রি করতে হয় ২০০ টাকায় প্রতি কেজিতে ৮০ টাকারও কম ইনকাম হয়। সারাদিন ঘুরেও ৩-৪ কেজি বাদাম বিক্রি করতে অনেক কষ্টকর। আগে বাদামে দাম কম ছিলো আয় রোজগারও ভালো হতো। খেটে খাওয়া দিনমজুরসহ সাধারণ মানুষরা এমনই কথা বলছেন।
বাজারের এমন পরিস্থিতিতে বিক্রেতারা যে স্বস্তিতে আছেন সেটিও কিন্তু না। বেচা-কেনা কমে যাওয়ায় তারাও অস্বস্তিতে পড়েছেন। ক্রেতা সাধারণকে বোঝানো কষ্টকর হয়ে পড়ছে তাদের জন্য।
পৌরশহরের দৈনিক বাজারে নিত্য পণ্য কিনতে আসা রিকশা চালক সুকুমার রায় বলেন, বাজারে সবকিছুরই দাম বেশি। বাধ্য হয়ে টেম্পার নষ্ট হয়ে যাওয়া পচা পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। তাও ৩৫ টাকা কেজি। উপায় নেই। বাজার যেন পাগলা ঘোড়া। সবকিছুর দাম হু হু করে বেড়েই যাচ্ছে।
বাজার করতে আসা আব্দুল গফুর বলেন, পেঁয়াজ রসুন আদার দাম অনেক বেড়ে গেছে। সবকিছুর দাম এত বেশি যে ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। আমাদের যে ইনকাম, তা দিয়ে মাসের ১০ দিনের বাজারও হয় না। আমরা গরিব মানুষ। কোনো কিছুতেই হাত দেওয়া যাচ্ছে না। আজকে যে জিনিসের দাম ১০ টাকা, কাল তার দাম ৩০ টাকা। এমন করে দাম বাড়লে মানুষ বাঁচবে কী করে?
সবজি বিক্রেতা আব্দুল সাত্তার বলেন, আগের তুলনায় এখন পেঁয়াজ, রসুন, আদা সবকিছুরই দাম বেশি। কারণ আমরা এসবের সরবরাহ ঠিকমতো পাচ্ছি না। যা পাচ্ছি তা অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। মানুষকেও বোঝাতে পারছি না। প্রতিদিনই দাম বাড়ছে।
মনিরুল ইসলাম( ছদ্মনাম) নামের এক সরকারি চাকরিজীবী বলেন, বেতনের টাকায় মাস শেষে বাড়ি ভাড়া, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ দেওয়ার পর যা থাকে তাতে মাসের বাজার হচ্ছে না। মানসিক প্রেসারে দিন যাচ্ছে। কোনো উপায় পাচ্ছি না।