ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি\চাকুরী স্থায়ী করণের এক দফা দাবিতে দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির আউটসোর্সিং অস্থায়ী ২৮৭ জন কর্মচারীরা আমরন অনশন শুরু করেছেন। শুক্রবার (২৮ ফেব্রæয়ারী) সকাল থেকে আন্দোলনরত কর্মচারীরা খনির অভ্যন্তরে শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সামনে এই অনশন কর্মসূচী পালন শুরু করেন।
ইতিপূর্বে তারা গত ২৩ ফেব্রæয়ারী থেকে সারা দেশের ন্যায় খনিতে বেতন বৈষম্য, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, বৈশাখী ভাতা, ওভারটাইম ও উৎসব বোনাস, নৈমিত্তিক ছুটি ও মাতৃত্ব কালীন ছুটিসহ পাঁচ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের ডাকা কর্মসূচীর অংশ হিসেবে কর্মবিরতি শরু করে; কিন্তু গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাদের দাবির প্রতি খনি কর্তৃপক্ষ দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ না নেয়ায় তারা শুক্রবার সকাল থেকে আমরন অনশন কর্মসূচীর ডাক দিয়ে অনশন শুরু করে।
শুক্রবার বিকেল ৪টায় বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি গেটে বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের প্রতিনিধি আশরাফুল আলমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তারা ১৫-২০ বছর ধরে একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। কিন্তু স্থায়ী কর্মচারীদের তুলনায় তাদের নানা সুবিধা, যেমন বেতন, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, বৈশাখী ভাতা এবং উৎসব ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একই সাথে তাদের চাকুরী স্থায়ীকরণ বিষয়টি খনি কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন থেকে ঝুলিয়ে রেখে একই প্রতিষ্ঠানে একই পদে চাকুরী করলেও স্থায়ী কর্মচারীদের তুলনায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা।
তিনি বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে ২০১৮ সালে প্রজ্ঞাপণ জারী করে আউটসোর্সিং কর্মচারীদের ওভারটাইম, উৎসব বোনাস, মাতৃত্বকালীন ছুটি সহযাবতীয় সুযোগ সুবিধা বাতিল করা হয়। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েন খনির অস্থায়ী ২৮৭ কর্মচারী। এরপর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার সরকারের পতন হলে আশার আলো জাগে কর্মচারীদের মনে।
তারা বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের ব্যানারে ঢাকায় আন্দোলন করেন। তখন প্রধান উপদেষ্টা পরিষদ বৈষম্য বিবেচনার আশ্বাস দিলে আন্দোলন শিথিল করে কাজে যোগ দেয়। কিন্তু ৬ মাসেও দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ না নেয়ায় আবারও আন্দোল নেযায় কর্মচারীরা।
সেই আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ২৩ ফেব্রæয়ারী থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন কিন্তু এতে কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ না থাকায় এক দফা দাবি ‘চাকুরী স্থায়ী” করণ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রিয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই আমরন অনশন শুরু করেছেন।
এছাড়া, ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির আউটসোর্সিং কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগ দিতে বলা হয়। কিন্তু খনি কর্তৃপক্ষ নানা তালবাহানা করে এবং রায় বাস্তবায়ন করতে গড়িমসি করছে। সর্বশেষ ২৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ খনি কর্তৃপক্ষের রিভিউ খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে।
এ ব্যাপারে খনির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ ছানা উল্লাহ জানান, এই সমস্যা সারা দেশের, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে যা সিদ্ধান্ত আসবে আমরা তাই বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব। একক ভাবে আমাদের কিছু করার নেই। কোর্টের রায় সর্ম্পকে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, এটি আইন মন্ত্রণালয়ে অপেক্ষাধিন রয়েছে, সেখান থেকে তদন্ত আসলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।