মোঃ মজিবর রহমান শেখ,,
কাজেই আসছে না কোটি টাকার বর্জ্য শোধনাগার
ঠাকুরগাঁও চিনিকলের নির্গমন করা তরল বর্জ্য পদার্থ যেন পরিবেশ দূষিত না করে তাই বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে প্রকল্প বাস্তবায়ন সংস্থা বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। কিন্তু চিনিকলে চলতি মৌসুমের আখ মাড়াই চললেও পরিবেশ দূষণ রক্ষায় কোনো কাজে আসছে না কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বর্জ্য শোধনাগারটি (ইটিপি)। মাসের পর মাস অকেজো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই বর্জ্য শোধনাগারটি। অথচ নবনির্মিত বর্জ্য শোধনাগারের পাশ দিয়েই সুরসুর করে বয়ে যাচ্ছে চিনিকলের নির্মগমন করা দূর্গন্ধযুক্ত তরল বর্জ্য পদার্থ। যা নদী নালা খাল বিলে গিয়ে মিশে পরিবেশ দূষণ করছে এবং দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। চিনিকলের বর্জ্য শোধনাগারটিতে গিয়ে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টাঙানো সাইনবোর্ড। সেখানকার তথ্যমতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের ১৪টি চিনিকলে বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) প্রকল্প ২০২০ সালের ৩০ জুন বাস্তবায়ন হয়েছে। কোড নাম্বার-২২৪২৫৯৩০০। আর এ প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫১০.৩১ লাখ টাকা। গড় হিসাবে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও চিনিকলের বর্জ্য শোধনাগারটি নির্মাণ কাজে ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ৭ লাখ ৮ হাজার টাকা। কোটি টাকার এ শোধনাগারটিতে পানি জমে আছে। যেখানে কোকের বোতল ও ময়লা আবর্জনা ভেসে আছে।
ঠাকুরগাঁও রোড শুক নদীর পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ মাহাবুব আল হাসান বাদল বলেন, চিনিকলের সমস্ত তরল বর্জ্য পদার্থ নদীতে এসে মিলত হয়। এতে করে নদীর পানিও দুর্গন্ধ হয়। পরিবেশ এতটাই দূষিত হয় যে, নদীর আশপাশেও থাকা যায় না। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এমন পরিবেশ পুরোপুরিভাবে অনিরাপদ। স্থানীয় জেলে খাজির উদ্দীন মিয়া বলেন, সুগারমিলের দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি যখন আসে তখন পানিতে নেমে মাছ শিকার করা যায় না। শরীর চুলকায়। এতে করে চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ি আমরা। জীবিকার তাগিদে তবুও জেনে বুঝেই পানিতে নামতে হয়। এ সমস্যাটির সমাধান করা দরকার।
কৃষক মোঃ চৈতু মোহম্মদ বলেন, নদী সংলগ্ন কৃষি জমিতে আমি কৃষি পণ্য উৎপাদন করি। চিনিকলের তরল বর্জ্য পদার্থ নদীতে এসে পড়ে। ফলে আমাদের কৃষিকাজ ও উৎপাদন ব্যহত হয়। এ বিষাক্ত পানির কারণে আমাদের ফসল হয় না। কাপড় ব্যবসায়ী মোঃ খাদেমুল ইসলাম বলেন, সরকার এত টাকা খরচ করে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ করেও কোনো লাভ হয়নি।
ঠাকুরগাঁও সুগারমিল স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোঃ রাসেল মাহমুদ বলেন, স্কুলের দক্ষিণের দুটি রাস্তা দিয়ে আমরা প্রতিদিন শত শত ছাত্র ছাত্রী যাতায়াত করি। এপাশে স্কুলে যাওয়ার দুটি রাস্তা। পশ্চিমের রাস্তার পাশে বর্জ্য শোধনাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে। সেটি চালু না হওয়ায় ওদিক থেকে ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানি পূর্বের দিকে আসে। দুই দিক দিয়েই আমাদের নাক চেপে ধরে স্কুলে যেতে হয়। পরিবেশ নিয়ে কাজ করা মোঃ মামুনুর রশিদ বলেন, প্রতিবছর ঠাকুরগাঁও চিনিকল থেকে ৮-১০ হাজার ঘনমিটার তরল বর্জ্য নির্গত হয়। বর্জ্য শোধনাগারটি চালু না হওয়ায় যে শুধু পরিবেশ দূষণ হচ্ছে তা নয়, এটি এখন পুরোটাই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ শোধনাগারটি এখন দর্শনীয় স্থানে রূপ নিয়েছে। স্কুলের প্রাথমিকের ছেলে-মেয়েরা এখানে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ঘোরাফেরা করছে ও দৌড়ঝাঁপ করছে। যেকোনো সময় পা পিছলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পরিবেশের দূষণ রক্ষায় এটা চালু হওয়াটা যেমন জরুরি, তেমন জরুরি এখানে নিরাপত্তা দেওয়া। কারণ শোধনাগারটি একদম উন্মুক্ত। চারপাশে কোনো প্রাচীর নেই। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও চিনিকলের ইঞ্জিনিয়ার মোঃ কামরুল হাসান বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার কারণে বর্জ্য শোধনাগারটি চালু করা সম্ভব হয়নি। আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে ইলেক্ট্রিক তারসহ আনুসাঙ্গীক জিনিসপত্র ক্রয়ের জন্য টাকা চেয়েছি। ঠাকুরগাঁও চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের কাজটি করা হয়েছে। এটি এখনো চিনিকলের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি এবং আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করা হয়নি। তবে শিশুদের নিরাপত্তার জন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।