তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি :
দেশের উত্তরের দুই দেশের সীমান্ত প্রবাহিত মহানন্দা নদীর এক কিলোমিটার পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞায় বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। নদীতে পাথর উত্তোলনে জীবিকার দুয়ার খুলে দেয়ার দাবিতে অবস্থান নিয়েছে শ্রমিকরা। বুধবার সকাল (২৩ মার্চ) নদী মহানন্দায় পাথর উত্তোলনের দাবিতে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন চত্ত¡রে অবস্থান কর্মসূচি নেয় শ্রমিকরা। সকাল ১০টা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত প্রায় ৫ ঘন্টা অবস্থান নেন তারা।
শ্রমিকদের দাবি এ নদীর পাথরই তাদের জীবিকার মূল উৎস। নদীতে পাথর তুলে জীবিকা চলে তাদের। পরিবারের মৌলিক চাহিদা মেটাতে হয় এ পাথরের উপর ভরসা করেই। একদিন নদীতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকলে খাবার জুটে না পরিবারের মুখে।
শ্রমিকরা জানান, প্রশাসন যে মহানন্দা নদীর এক কিলোমিটার জুড়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছে এক কিলোমিটারেই জীবিকা নির্বাহ করছে তিন হাজারও বেশি শ্রমিক। মহামারী করোনার কারণে কাজকর্ম কমে যাওয়ায় কমে গেছে আয়-রোজগার। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে আয়ের তুলনায় ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে গেছে। নদীতে পাথর তুলতে না পারার কারণে একদিকে যেমন চরম অভাব তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে অপারগতার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋনের কিস্তি দিতে পারছেন না এই শ্রমিকরা।
বিষয়টি নিরসন কল্পে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আব্দুল লতিফ তারিন, সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী, জেলা কৃষকলীগের সভাপতি তাজিরুল ইসলাম তাজু, পাথর-বালি সমিতির সভাপতি তৌহিদ হাসান তুহিনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু জানান, মহানন্দা নদীতে এক কিলোমিটার জুড়ে যে পাথর উত্তোলনের নিষেধাজ্ঞায় শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস থাকায় কোন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, মহানন্দা নদীতে নির্বিচারে পাথর উত্তোলনের কারণে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ফসলি জমি নদীর গর্ভে বিলিনের আশঙ্কায় চলতি মাসে ৯ মার্চ নদীর এক কিলোমিটার পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। ডাকবাংলো পিকনিক কর্ণার হতে পুরাতন বাজার পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মডেল থানা, প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঈদগাহ, গোরস্থান, মন্দির, প্রাণি সম্পদ কার্যালয় ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ নদীর তীরবর্তী গ্রাম, ঘরবাড়ি, চা বাগান, আম বাগানসহ ফসলি জমি রক্ষার্থে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের চিঠি প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা। পরে ১৪ মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে মহানন্দার নদীর ভাঙ্গন থেকে বাংলাদেশী ভূখন্ড সরকারি সম্পদ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার্থে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের পুরাতন বাজারস্থ শিবমন্দির হতে পিকনিক কর্ণার/ডাকবাংলো পর্যন্ত মহানন্দা নদী হতে পাথর ও বালি উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ করার নিমিত্ত অভিযান পরিচালনার লক্ষে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।