পঞ্চগড় প্রতিনিধি\ কোন কাজ করতে লাগে পারিশ্রমিক। দিনশেষে শ্রমিকদের দিতে হয় মজুরী। কিন্তু পঞ্চগড়ে কোন ধরণের পারিশ্রমিক ছাড়াই শুধু পাটখড়ির জন্য বিনামূল্যে জাগ দেয়া পাট থেকে আঁশ ছড়াতে ব্যস্ত নারী-পুরুষ এমনকি শিশুরাও। অনেক জায়গায় দেখা গেছে পরিবারের সকল সদস্য একযোগে পাট থেকে আঁশ ছড়িয়ে তা রোদে শুকোতে দিচ্ছে। বিকেলে সেই পাটখড়ি নিয়ে বাড়িতে নিচ্ছে। জেলার সর্বত্র এখন এমন চিত্র নজরে আসে।
চলতি বর্ষা মৌসূমে তুলনামূলকভাবে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে পঞ্চগড়ে। ক্ষেত থেকে পাট কাটার পর তা জাগ দেয়ার পানি পর্যন্ত ছিল না। তবে এ অবস্থা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কাঙ্খিত বৃষ্টি হওয়ার পরই নিচু জমিতে আমন ধানের চারা লাগানোর পর পাট কাটতে শুরু করে কৃষকরা। চাষ দিয়ে সেই জমিতেও ইতোমধ্যে আমন চারা লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে। আর ক্ষেত থেকে কেটে আনা পাট সড়কের ধারের খালসহ নালা নর্দমার পানিতে জাগ দিয়ে রেখেছে কৃষকরা। এখন চলছে জাগ দেয়া পাট পানি থেকে তুলে আঁশ ছড়ানোর কাজ। এ সময়টাতে কৃষি শ্রমিকদের হাতে কোন কাজ না থাকায় শুধু পাটখড়ির জন্য বিনামূল্যে পাটের আঁশ ছড়াচ্ছে তারা। এই কাজের জন্য তারা কোন পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। অনেক স্থানে দেখা গেছে, স্কুল পড়–য়া শিশুদের নিয়ে বাবা-মা সবাই মিলে পাটের আঁশ ছড়াচ্ছে তারা। সারাবছর নিজের রান্নার কাজের পাটখড়ি জোগাড় করছে তারা।
পঞ্চগড় পৌরসভার জালাসি পাড়া গ্রামের রেহানা বেগম (৪৫)। স্বামী মানুষের জমিতে কাজ করেন। রান্নার জন্য এখনও তাদের নির্ভর করতে হয় খড়ির উপর। পাঁচ সদস্যের সংসারের রান্না করতে সারাবছর প্রয়োজন হয় অনেক খড়ি। ইদানিং নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যের সাথে দাম বেড়েছে খড়িরও। তাই তারা সবাই মিলে পাটের আঁশ ছড়াচ্ছেন। রেহানা জানান, গত দুইদিন ধরে বাড়ির পাশের এক কৃষকের পাটের আঁশ ছড়াচ্ছেন তারা। এরই মধ্যে যতগুলো পাটখড়ি পেয়েছেন তাতে করে সারাবছরের চুলা জ্বালানোর কাজ করতে পারবেন।
জালাসি এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর আমি এক একর জমিতে পাট চাষ করেছি। সড়কের পাশের খালে এসব পাট জাগ দিয়ে রেখেছি। এসব পাটের আঁশ ছড়াতে আমার অনেক টাকা লেগে যাবে। তাই আশপাশের গরিব মানুষদের বলেছি যার যার সিঞ্জা (পাটখড়ি) দরকার ছিলে (ছড়িয়ে) নিয়ে যাও। অনেকেই দেখছি পানি থেকে জাগ দেয়া পাট তুলে আঁশ ছড়াচ্ছে। আমার এক একর জমির পাটের আঁশ ছড়াতে এক সপ্তাহও লাগেনি। আমি শুধু লোক নিয়ে আঁশ রোদে শুকিয়ে বিক্রির জন্য বাড়িতে রেখেছি। এতে করে আমারও খরচ বাঁচছে এবং গরিব মানুষদেরও উপকার হচ্ছে।