রবিবার , ২১ আগস্ট ২০২২ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চা শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্যে মূখর পঞ্চগড়সহ উত্তরের পাঁচ জেলার চা বাগানগুলো

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
আগস্ট ২১, ২০২২ ১০:৪৩ অপরাহ্ণ

পঞ্চগড় \ সর্বশেষ গত শনিবার ১৪৫ টাকা মজুরির আশ্বাষে সিলেট ও চট্টগ্রামের চা বাগানের শ্রমিকরা ১২ দিনের আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও অচলাবস্থা কাটেনি। সিলেট ও হবিগঞ্জে প্রত্যাখান করে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে তারা। গতকাল রোববারও তারা সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে। তবে পঞ্চগড়সহ উত্তরের পাঁচ জেলার চা বাগানগুলোতে এখন পর্যন্ত ধর্মঘটের কোন প্রভাব নেই। অস্থায়ীভাবে কেজি হিসেবে কাঁচা চা পাতা উত্তোলন করায় এই অঞ্চলে আগের মতই চলছে সব কাজ। মৌসূম চলায় প্রতিদিনই চা বাগান থেকে কাঁচা চা পাতা সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা। প্রতিদিন চা পাতা তুলে একেকজন শ্রমিক আয় করছেন ৪শ টাকা থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত।
পঞ্চগড় চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড়সহ পার্শ্ববতি পাঁচ জেলায় ১০ হাজার ২শ একর জমিতে চা আবাদ হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এই অঞ্চলে রেকর্ড ৭ কোটি ৩৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কেজি সবুজ চা পাতা থেকে এক কোটি ৪৫ লক্ষ ৪০ হাজার কেজি বা ১৪ দশমিক ৫০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। বর্তমানে চলছে চা উৎপাদনের মৌসূম। প্রতিবছর মার্চ মাস থেকে শুরু হয়ে নভেম্বর মাস পর্যন্ত চলে চা উৎপাদনের কার্যক্রম। এক মৌসূমে সাত পর্বে পাতা তোলার কাজ করা হয়। আর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারী এই তিন মাস চা পাতা সংগ্রহ ও কারখানাগুলোতে চা উৎপাদন বন্ধ থাকে। এ সময় চাষিরা তাদের বাগান প্রæনিং করে থাকে। পাতা তোলার ৪০ দিন পরিচর্যার পর আবারও শুরু হয় পাতা তোলার কাজ। বছরের নয় মাস কাঁচা চা পাতা তোলার কাজে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন চা শ্রমিকরা। এখানে মূলত অস্থায়ীভাবে চা শ্রমিকরা পাতা তোলার কাজ করে থাকেন। প্রতিকেজি কাঁচা চা পাতা তুলে তারা পারিশ্রমিক পান তিন টাকা করে। নারী শ্রমিকরা প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশ কেজি এবং পুরুষ শ্রমিকরা তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ কেজি পর্যন্ত কাঁচা চা পাতা তুলতে পারেন। সে হিসেবে একজন নারী শ্রমিক প্রতিদিন ৪শ টাকা থেকে ৬শ টাকা এবং পুরুষ শ্রমিকরা ৮শ টাকা থেকে এক হাজার পর্যন্ত আয় করে। নয় মাস পাতা তোলার কাজের পর এসব শ্রমিকরাই আবার পরের তিন মাস বাগান পরিচর্যার কাজ করে থাকে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার জগদল এলাকার চা শ্রমিক হোসনেআরা বেগম জানান, তিনি প্রতিদিন গড়ে ২শ কেজি কাঁচা চা পাতা তুলছেন। প্রতি কেজি তিন টাকা হিসেবে তার প্রতিদিনের মজুরী দাড়ায় ৬শ টাকা। সংসার সামলিয়ে নয় মাস তিনি ব্যস্ত সময় কাটান চা পাতার তোলার কাজ করে। একই এলাকার চা শ্রমিক খয়রুল হোসেন জানান, আগে তিনি কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সর্বোচ্চ দৈনিক মজুরি পেতেন ৫শ টাকা। গত কয়েক বছর ধরে তিনি চা বাগান থেকে পাতা তোলার কাজ করছেন। এখানে প্রতিদিন তিনি উপার্জন করছেন ৮শ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত।
তেঁতুলিয়া উপজেলা শিলাইকুঠি বালাবালি এলাকার চা বাগান মালিক অবসরপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম জানান, আমার বাগান থেকে ছোট করে পাতা কাটি। এজন্য প্রতি কেজি কাঁচা পাতা কাটার জন্য শ্রমিককে দেই ৪ টাকা করে। একজন পুরুষ শ্রমিক দুই থেকে তিনশ কেজি এবং নারী শ্রমিকরা এক থেকে দেড়শ কেজি পর্যন্ত পাতা কাটতে পারে। আগে বড় করে পাতা কাটতে দিতাম ৩ টাকা কেজি দরে।
পঞ্চগড় চা বোর্ডের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন জানান, সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের শ্রমিকরা স্থায়ী। মজুরি ছাড়াও তারা রেশন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। পঞ্চগড়সহ উত্তরের চা বাগানগুলোতে চা শ্রমিকরা অস্থায়ীভাবে কাজ করে। এই অঞ্চলের শ্রমিকরা বাগান থেকে কাঁচা চা পাতা তুলে কেজি হিসেবে। বর্তমানে এই অঞ্চলে প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা তুলে শ্রমিকরা পান তিন টাকা করে। পঞ্চগড় জেলার চা বাগানগুলোতে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করে। যার অর্ধেকই নারী শ্রমিক। এখানে নারী শ্রমিকরা গড়ে পাঁচ থেকে ছয়শ টাকা ও পুরুষ শ্রমিকরা গড়ে আট থেকে এক হাজার ২শ টাকা পর্যন্ত মজুরী পান। অধিকাংশ নারী শ্রমিক সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি থেকে সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও

আপনার জন্য নির্বাচিত