পঞ্চগড় প্রতিনিধি\ পঞ্চগড় চিনিকলের ইক্ষু উন্নয়ন সহকারী বা সিডিএ পদে চাকুরী করতেন রথীন্দ্র কুমার সিংহ। ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর অবসরে যান তিনি। চিনিকলের কাছে তাঁর গ্র্যাচুয়িটি বাবদ পাওনা ১৯ লাখ টাকা পাননি ছয় বছরেও। সপ্তাহের অধিকাংশ দিনই তিনি চিনিকলে এসে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাওনা টাকার জন্য ধর্না দিচ্ছেন। শুধুু আশ^াস ছাড়া কিছুই মেলেনি তাঁর। রথীন্দ্র কুমার সিংহের মত পঞ্চগড় চিনিকলের বেতন কমিশন ও মজুরি কমিশনের অবসরে যাওযা ২৭৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর দশা একই। সব মিলিয়ে তাদের পাওনা ১১ কোটি ৬০ লাখ টাকার ওপরে। দীর্ঘদিন চাকুরী করে অবসরে যাওয়ার এতদিন পরও কবে তাঁরা গ্র্যাচুয়িটির টাকা পাবেন এমন নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না তারা। চিনিকল কর্তৃপক্ষ বলছে বরাদ্দের অভাবে তাদের পাওনা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। অবশেষে তাঁদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের দাবিতে মাঠে নেমেছেন তাঁরা।
গতকাল শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় চিনিকল গেটে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করেছেন পঞ্চগড় চিনিকল অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারি ও কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি। বিক্ষোভ সমাবেশে সমিতির সভাপতি নাইবুল ইসলাম ও সম্পাদক শহীদুল্লাহ বলেন, ২০১৬ সাল থেকে অবসরে যাওয়া ২৭৫ জন কর্মকর্তা কর্মচারির গ্র্যাইচুটির টাকা পাচ্ছে না। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেকে মেয়ের বিয়ে দিতে পারছেন না। ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছেন না। অনেকেই অর্থাভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেকেই আবার অসুস্থতায় ভুগছেন। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে পারছেন না। অবসরোত্তর পরিশোধের দাবিতে ও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা বলেন, ২৭৫ জন কর্মকর্তা কর্মচারির গ্র্যাইচুটি বাবদ ১১ কোটি ৬০ লাখ টাকার প্রয়োজন। কিন্তু বরাদ্দের অভাবে এ টাকা প্রদান করতে পারছে না চিনিকল কর্তৃপক্ষ। বেতন কমিশন ও মুজুরি কমিশনের এসব কর্মকর্তা কর্মচারির সবাই পাঁচ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত গ্র্যাইচুটি পাওনা রয়েছে। এদিকে ২০১৯-২০২০ মৌসুম থেকে চিনিকলটিকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা কর্মচােিদর অবিলম্বে গ্র্যাইচুটিসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা প্রদান করা না হলে শান্তিপূর্ণভাবে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর চিনি শিল্প ভবন ও শিল্প মন্ত্রণালয় প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান এবং ৭ সেপ্টেম্বর একই স্থানে অবস্থান গ্রহণ ও প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা করা হয়েছে।
পঞ্চগড় চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুরশিদ জাহান মাফরুহা মানববন্ধনে এসে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ২০১৬ সাল থেকে অবসরে যাওয়া ২৭৫ জন কর্মকর্তা কর্মচারির গ্র্যাইচুটি পাওনা রয়েছে। বাজেট বরাদ্দ না পাওয়ায় পরিশোধ করা যাচ্ছে না। বিষয়টি বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে একাধিকবার জানানো হয়েছে।