বিরল (দিনাজপুর) প্রতিনিধি \ দিনাজপুর জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক-২০২২ নির্বাচিত হয়েছেন মোছাঃ রুহানা আখতার। তিনি বিরল উপজেলা ২নং ফরক্কাবাদ ইউনিয়নের ১০ নং তেঘরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এর আগে তিনি উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক ও শ্রেষ্ঠ কনটেন্ট নির্মাতা হিসেবে নির্বাচিত হোন। তাঁর এই সাফল্যে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দসহ অভিভাবক ও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বার্তায় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছেন।
শিশুর মেধা বিকাশের উপায় সম্পর্কে জেলা পর্যায়ে এবারের নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক মোছাঃ রুহানা আখতার জানান, শিশু বয়স থেকেই শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট বই পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই যেমন: গল্পের বই, ছড়া, ছোটদের কবিতার বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পাঠ সংশ্লিষ্ট বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়লে শিশুর মানসিক বিকাশ প্রসারিত হয় এবং মনের ভাব প্রকাশের জড়তা থাকে না। ফলে ক্রমান্বয়ে শিশুদের অত্যন্ত কঠিন ও জটিল শব্দ, বাক্য সহজে বোধগম্য হয়। তাই শিশুদের বই পড়ায় উৎসাহিত করা উচিত।
বর্তমানে মোবাইল ফোনে গেম খেলা টুইটার, ফেসবুক আসক্তি না হয়ে যদি শিশুদের বই পড়ায় আগ্রহী করা যায় তাহলে বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটে।একটি পরিবারে যদি মা, বাবা, ভাই, বোন, দাদা দাদির নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস থাকে তাহলে শিশু জন্মগতভাবে নিয়মিত বই পড়া দেখে উৎসাহিত হয় এবং উত্তরাধিকারসূত্রে শিশুটির বই পড়ার মাধ্যমে মেধার বিকাশ সাধিত হয়।
বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা অনুযায়ী নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে আগে পরিবারকে উদ্যোগ নিতে হবে তাহলে শিশুরাও উদ্যোগী হয়ে উঠবে, অভ্যাস গড়ে উঠবে এটা তাদের জন্য সুফল বয়ে আনবে ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
তাই শিশুর মেধার বিকাশ ঘটানোর জন্য বেশি বেশি করে কথা বলার অভ্যাস, জড়তা কাটানোর জন্য নতুন নতুন শব্দ ও বাক্যের সাথে পরিচিত হওয়া এবং শব্দভান্ডারে পুরোপুরি সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য বই পড়া অনস্বীকার্য।
মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন ধরনের গল্প, ছড়া, কবিতা, মীনা বই বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। যার ফলশ্রæতিতে বুক কর্নার স্থাপন করা হয়। প্রতি কর্মদিবসে সপ্তাহের বুধবার যদি ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত রেজিস্টার হালনাগাদ করে শিশুদের একজন সহকারি শিক্ষকের অধীনে এই বইগুলি পড়ার জন্য প্রদান করা হয় তাহলে চমৎকারভাবে শিশুদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে।
শিশুরা শব্দভান্ডার ও শব্দবাক্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ হবে, তাদের মেধা মননের অসাধারণ বিকাশ ঘটবে এবং আমাদের মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার আরও অগ্রগতি হবে বলে আশা করা যায়।
উল্লেখ্য, তেঘরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উত্তরবঙ্গের মধ্যে প্রথম ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ খ্রিস্টাব্দে মিডডে মিল কর্মসূচি চালু করা হলে তা অধ্যবধি চলমান রয়েছে। এছাড়াও বিদ্যালয়টিতে শিশু শ্রেণি হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৩৬৭ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে এবং একজন প্রধান শিক্ষকসহ ১১ জন সহকারী শিক্ষক ও ১ জন নৈশ্য প্রহরী কাম দপ্তরী দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এর আগে এ বিদ্যালয়ের সভাপতি এ্যাড. মোঃ রবিউল ইসলাম (পি.পি.) ২০১৫, ২০১৮ ও ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ এসএমসি সভাপতি নির্বাচিত হোন এবং গত ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে সহকারী শিক্ষক জাকিয়া ফেরদৌস উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক নির্বাচিত হোন। বিদ্যালয়টিতে সকলের সহযোগিতা ও আন্তরিকতায় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদান, জুম এর মাধ্যমে ভার্চুয়াল মিটিং, শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরী উপকরণে শ্রেণিকক্ষ স্বজ্জিত করণ, ক্ষুধে ডাক্তার কার্যক্রমসহ সাংস্কৃতিক চর্চায় ব্যাপক অবদান রেখে আসছে। বিশেষ করে কভিড-১৯ করোনাকালীন সময়ে গুগল মিট এর মাধ্যমে পাঠদান এবং শিখন ঘাটতি পূরণে ওয়ার্কশীট বিতরণের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করায় অভিভাবকদের পক্ষ হতে বেশ প্রশংসা অর্জন করে। তাঁর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও লেখাপড়াসহ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্বর ধারক হিসেবে ইতিমধ্যে পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি শিক্ষার মান উন্নয়নে সর্বদা সচেষ্ট ভূমিকা পালন করে আসছেন।