তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) সংবাদদাতা
তেঁতুলিয়ায় পৌষের কুয়াশায় জেকে বসেছে শীত। শীতের প্রকোপে জর্জরিত সাধারণ মানুষ। গত চারদিন ধরেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে এ অঞ্চলে। সোমবার সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গতকালের চেয়ে কমেছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রার রেকর্ডের বিষয়টি জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর তথ্যানুযায়ী, ১০ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড দিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বছর। গতকালের চেয়ে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। এ শীতে সড়কে বিভিন্ন যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে। শীতের তীব্রতার কারণে গ্রামে শহরের হাটবাজারগুলোতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানান, নতুন বছরের শুরুতেই ধরেই প্রচন্ড ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রা অনেক নিচে নেমে এসেছে। কদিন ধরে ঘন কুয়াশা থাকলেও শুক্রবার কুয়াশা দেখা যায়নি। তবে কনকনে শীতে কাহিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সন্ধ্যার পর থেকে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় শীত নেমে আসে। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত শীত অনুভূত হয়। দিনেও আগের মতো গরম নেই। বিকেল গড়ালেই ঠান্ডা লাগতে শুরু করে।
এতে করে হাড়কাঁপানো শীত পড়ায় বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণির খেটে খাওয়া মানুষ। ভোর ৬টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কনকনে শীতের কারণে কাজে যেতে পারছেন না অনেকেই। তবে পেটের তাগিদে কাউকে নদীতে পাথর তুলতে, কাউকে চা-বাগানে আবার কাউকে দিনমজুরের কাজ করতে যেতে দেখা গেছে।
চা-শ্রমিক বাদল, বাবু ও হায়াত জানান, কয়েকদিন ধরে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। সকালে চা-বাগানের পাতা তুলতে গিয়ে হাত-পাতা অবশ হয়ে আসে। তারপরও কাজ করতে হচ্ছে।
পাথর শ্রমিক জমিরন, তাসলিমা ও রমিনাসহ কয়েকজন নারী শ্রমজীবি নারী জানান, আমরা আজানের পর পরই ঘুম থেকে উঠি। কদিন ধরে খুব ঠান্ডা। ঘরের মেঝে, আসবাবপত্র সব বরফের মতো লাগে এবং হাতপা অবশ হয়ে আসে। তারপরও কাজ শেষ করে পেটের দায়ে পাথরের কাজে যেতে হচ্ছে।
এদিকে দিন-রাতে তাপমাত্রা দুই রকম থাকায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। জ্বর, সর্দি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।
চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে। এমনিতে শীত মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতজনিত রোগ হিসেবে সর্দি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। আর শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে কিছুটা হলেও সুরক্ষা মিলবে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, তাপমাত্রা অনেকটা কমেছে। সোমবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা হিসেবে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গত চারদিন ধরেই সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে। সামনে তাপমাত্রা আরও নিচের দিকে নামতে পারে বলে তিনি জানান।