শনিবার , ৮ এপ্রিল ২০২৩ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বীরগঞ্জে কোটি-কোটি টাকার সম্পত্তি অর্ধশত বছর ধরে পরিত্যাক্ত প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছেন সরকার

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
এপ্রিল ৮, ২০২৩ ৫:৪৮ অপরাহ্ণ

বীরগঞ্জ, দিনাজপুর থেকে বিকাশ ঘোষ ॥ বীরগঞ্জে কোটি-কোটি টাকার সম্পত্তি ৫৩ বছর ধরে পরিত্যাক্ত প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছেন সরকার।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভোক্তভোগি সূত্রে জানা গেছে, ১৮৯০ইং সালে বীরগঞ্জ থানা গঠনকালে ১৮৭টি মৌজায় জনগনের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তৎকালীন বৃটিশ সরকারের আমলে দিনাজপুর জেলা পরিষদ থানা সংলগ্ন ২ দশমিক ৩৭ একর জমিতে একটি ডিস্পেনচারী, একটি ডাক্তার (এমবিবিএস) কোয়াটার, একটি কম্পাউন্ডার কোয়াটার নির্মানের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করে সরকারী ভাবে বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।

গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা যুদ্ধের পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সসহ ৩১ শর্যার হাসপাতাল নির্মাণ করে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স নির্মাণের পর পুরাতন কমপেক্স পরিত্যাক্ত হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পরিত্যাক্ত থাকার পর লুটেরা বাহিনীর সদস্যরা ইট, টিন, কাঠ, রড, লোহার পিলার সহ যাবতীয় মালামল লুট করে কমপেক্সটি নিশ্চিহৃ করে দেয়।

পরিত্যক্ত ডাক্তার মাঠটি দিন দিন ছোট হয়ে আছে। ওই মাঠটিতে ক্ষুদ্র ও প্রানি-ক ব্যাবসায়ী সরকারী সম্পত্তির পূর্ব ও দক্ষিন বাহু দখল করে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়ি নির্মাণ করে ভোগ দখলে আছেন অনেকই।

স্বাধীনতার উত্তর রাজনৈতিক পট পরিবর্তন বা দেশের সরকার বদল হলেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে বহুবার। বর্তমান সরকার এখন পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেনি। স্বাধীনতার পর ৭-৮ বার উচ্ছেদ অভিযানে হাজার হাজার ব্যাবসায়ীর ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের স্বীকার হয়ে লাখ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে অনেকে পথেও বসেছে।

এছাড়াও কাগজ করে দেওয়ার নাম করে অসহায় ব্যাবসায়ীদের কাছে জেলা পরিষদের ও স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু অসৎ কর্মচারী মার্কেটে করে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বারবার। এরপর এলাকার হাজার হাজার মানুষ স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা পরিষদের কাছে বহুতল সুপার মার্কেট নির্মানের দাবী তোলে আছে। কিন্তু ২’বিভাগের মালিকানার রশি টানা টানিতে জনতার দাবী পুরন হয়নি ৫০ বছরেও।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে স্থানীয় সাংসদ মনোরঞ্জন শীল গোপালের হস-ক্ষেপে স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের দাবী প্রত্যাহার করে নেয়। জেলা পরিষদ মালিকানা ফিরে পেলে বহুতল সুপার মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। জাতীয় সংসদ সদস্য মনেরঞ্জন শীল গোপাল গত ২৬ অক্টোবর/২০১০ইং জেলা পরিষদের অর্থায়নে “বহুতল সুপার মার্কেট” নির্মাণের জন্য ভিত্তি প্রস্থর আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্ধোধন ও মিষ্টি বিতরন করেন।

৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে বহুতল সুপার মার্কেটের ডিজাইনের নকসা ও পেলান তৈরী করে পরিত্যাক্ত ডাক্তার খানার মাঠ পরিস্কারের জন্য হাজার বছরের পুরাতন আম গাছ গুলো কেটে ফেলা হয়। দিনাজপুর জেলা পরিষদ মার্চ/২০১০ইং মাসে ৩-তলা পেলান তৈরী করে তলায় ১৮৯টি দোকান ঘর, ২য় তলায় ২০০টি দোকান ঘর ও ৩য় তলায় অফিস, বীমা, ব্যাংক ১২ হাজার বর্গফুট বরাদ্দ গ্রহনের জন্য র্নিধারিত ফরমে আগ্রহীদের কাছে দরখাস- আহবান করে।

প্রতিটি ফরমের মুল্য ১০০০/- (অফেরৎযোগ্য) নির্ধারন করে কয়েকশত ফরম নগদ মুল্যে বিক্রয় কর হয়। জেলা পরিষদের শর্ত মোতাবেক প্রথম কিস্তির ৫০ হাজার টাকা এককালীন জমানত হিসেবে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও মার্কেট নির্মাণের টেন্ডার আহবান করা হচ্ছে না।
জেলা পরিষদের সদস্য রোকনুজ্জামান বিপ্লব জানান, নব নির্বাচিত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন পরিত্যক্ত ডাক্তার খানার মাঠ পরিদর্শন করেছেন এবং নতুন ভাবে ডিজাইন করতে সামান্য বিলম্ব হচ্ছে। তিনি নিশ্চত ভাবে আরও জানান, অবিলম্বে বহুতল সুপার মার্কেট নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও