দিনাজপুর প্রতিনিধি \
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, যথাযোগ্য মর্যাদা, আনন্দ-উচ্ছ্বাসের ও কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলার মুসল্লিদের অংশগ্রহনে ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে দেশের বড় ঈদের জামাতে লাখো লাখো মুসল্লিরা একসাথে নামাজ আদায় করেছেন। উপমহাদেশের বৃহৎ এ ঈদগাহ মাঠে শান্তিপূর্ণভাবে দেশের বৃহৎ ঈদের জামাতে ৬ লাখ মুসল্লি ঈদ-উল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন বলে আয়োজকদের দাবী।
ঈদের দিন শনিবার ভোর থেকেই বিভিন্ন জেলা-উপজেলাসহ দুরদুরান্ত থেকে আসতে শুরু করেন মুসল্লিরা। মুসল্লিরা বিভিন্ন যানবাহনে ও পায়ে হেঁটে ঈদগাহ মাঠে আসেন। এসময় শহরের সব রাস্তাগুলো যেন একমুখী হয়ে যায়।
সকাল ৯টায় এই ঈদের জামাতের ইমামতি করেন দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শামসুল ইসলাম কাশেমী। নামাজ আদায় শেষে মোনাজাতে দেশ এবং মুসলি¬ম উম্মার শান্তি কামনা করা হয়।
বৃহৎ এ ঈদের নামাজে অংশ নেন-বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহম্মেদ, দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা, প্রশাসনের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাসহ সর্বস্তরের জনতা।
নামাজ শেষে এই ঈদগাহ মাঠ ও মিনার নির্মাণের উদ্যোক্তা এবং পরিকল্পনাকারী হুইপ ইকবালুর রহিম উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ ঈদের এ জামাত শান্তিপূর্ন হওয়ায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন,
একসঙ্গে ৬ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসুল্লি নামাজ আদায় করেছেন এ জামাতে। এশিয়ার মধ্যে বৃহৎ এ জামাত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভের জন্য এরই মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ঈদগাহ মিনার ও ময়দানটি আরও সম্প্রসারণের জন্য দেশি-বিদেশি কনসালটেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বিশ্বের বড় বড় মিনারগুলোর খবরাখবর নেওয়া হচ্ছে।
এবার দিনাজপুর জেলায় নয়, চুয়াডাঙ্গা,ফরিদপুর, জয়পুরহাট, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁ, পিরোজপুর, রংপুর জেলাসহ আশেপাশের অনেক মুসল্লি বাস, কার, মাইক্রো, জীপ এবং মোটরবাইকে করে এই ঈদ জামাতে অংশ নেন।
চুয়াডাঙ্গা থেকে আগত ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান ও স্বাস্থ্য বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন জানান, তারা এ জামাতের কথা শুনেছেন। এর আগে তারা শোলাকিয়াতেও নামাজ আদায় করেছেন। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এখানে এসে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি।
তারা আরও জানান, এতবড় মাঠ ও এত মুসল্লির সঙ্গে নিয়ে এটাই তাদের প্রথম নামাজ। তারা এখানে নামাজ আদায় করতে পেরে খুব খুশি।
নামাজ আদায় করে একইরকম অনুভূতি প্রকাশ করেন ফরিদপুরের মো. আমিন বলেন, এশিয়ার বড় জামাতের কথা শুনে ঈদের নামাজ আদায় করতে এসেছি। এটি আসলেই বৃহৎ জামাত। এত বড় জামাতে নামাজ আদায় করেছি সওয়াবের আশায়। তবে দূরের মুসল্লিদের জন্য বিশেষ ট্রেন কিংবা বিশেষ কোনো পরিবহন ব্যবস্থা করলে সহজেই আসা যেত।
বগুড়া থেকে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, ঈদের কারণে যানবাহন পেতে সমস্যা হয় দেখে ইচ্ছা থাকলেও অনেকে নামাজ আদায় করতে আসেন না। যদি প্রতিটি জেলা থেকে বিশেষ পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে মুসল্লি আরও বাড়বে।
যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের পক্ষ থেকে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্যসহ পুলিশ, র্যাব, আনসার, ডিবি, ডিএসবি, এনএসআই, ডিজিএফআই সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করেন। মাঠে ৩০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হয়। ছিল ঈদগাহের মাঝে র্যাবের ওয়াচ টাওয়ার, প্রবেশের পূর্বে মুসল্লিদের আনা যানবাহন রাখার বিভিন্ন পয়েন্টে চেকিং ব্যবস্থা। মাঠে মেটাল ডিটেক্টরে তল্লাশির পর প্রবেশ করানো হয় মুসল্লিদের।
উল্লেখ্য, উপমহাদেশের বৃহৎ ঈদগাহ দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ২০১৭ সালে নির্মিত ৫২ গম্বুজের এ ঈদগাহ মিনার। এই ৫০ গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাবের (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) উচ্চতা ৪৭ ফুট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ফুট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়। মিনার সিরামিক্স ইট দিয়ে আচ্ছাদিত। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলেই ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে ওঠে। ২০১৭সাল থেকে প্রতিবছর এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। এই গোর-এ শহীদ মযদানে একসঙ্গে ১০লাখ মানুষ ঈদের জামাত আদায় করতে পারার ব্যবস্থা রয়েছে। উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই। এছাড়াও পর্যটকদের কাছেও এটি দর্শনীয়। তবে মাঠের মধ্যে আরও কিছু স্থাপনা অপসরণের কাজ বাকি আছে, যা শেষ হওয়ার পর পুরো মাঠের আয়তন হবে ৬৫ একর।