বাংলাদেশ কৃষি ভিত্তিক দেশ। এখানে ৮০% লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। দেশের সব বিভাগ থেকে রংপুর বিভাগ ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে অগ্রনী ভ’মিকা পালন করছে। সেক্ষেত্রে রংপুর বিভাগের দিনাজপুর জেলায় বোরো ধান চাষে বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। এ জেলাকে খাদ্য শস্যের ভান্ডার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। জেলায় দুই জাতের ধান উৎপন্ন হচ্ছে হাইব্রিড ও উফশী। উফশী জাতের মধ্যে ব্রি-২৮, ব্রি-২৯, ব্রি-৫৮, মিনিকেট, সম্পা কাঠারী, বগুড়া সম্পা, জামাই কাঠারী, সোনামুখী, নানিয়া, কোটরা পারী ও বিয়ার-১৬। হাইব্রীড ধানের মধ্যে তেজ গোল্ড, হীরা-২, ব্রাক (রূপালী) ও এস এল ৮ এইচ। এবার আবহাওয়া অনুকুল পরিবেশ থাকায় মাঠে ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় কৃষকরা উৎসব মুখর পরিবেশে ধান কাটা-মাড়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বেশ কিছু দিন আগে আগাম ধান কাটা শুরু হয়েছে। বর্তমানে ৪১% ধান কাটা-মাড়াই হয়েছে। কৃষকরা ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। এবার সময়মত বৃষ্টি-পাতের জন্য ক্ষেতে ধান হয়েছে। বর্তমানে প্রচন্ড তাপ প্রবাহে ধানের বাজার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকরা নায্য দাম পেয়ে খুশি। বাজার ঘুরে দেখা গেছে মোট ধান বস্তা প্রতি ১৯০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে বিক্রয় হচ্ছে। আর চিকন ধান বিক্রয় হচ্ছে বস্তা প্রতি ২৫০০-২৬০০ টাকা।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের তথ্য মতে এবার দিনাজপুর জেলায় ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড ২৫ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে আর উফশী ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে উফশী ধানের ক্ষেত্রে ৪.২১ মেট্রিক টন এবং হাইব্রীডের ক্ষেত্রে ৪.৫৯ মেট্রিক টন প্রতি হেক্টরে। মোট ৬ লক্ষ ২৪ হাজার ৩ শত ৮৫ মেট্রিক টন উফশী ধানের ক্ষেত্রে আর হাইব্রীডের ক্ষেত্রে ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৯ শত ৫৩ মেট্রিক টন।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের অফিস সুত্রে বর্তমানে জেলায় ৪১% ধান কর্তন হয়েছে। সেই অনুযায়ী উফশী ও হাইব্রিড ধানের উভয় ক্ষেত্রে মোট ৬৯ হাজার ৫শত ১০ হেক্টর জমিতে ধান কাটা হয়েছে।
৪ নং শেখপুরা ইউনিয়নে কিষান বাজারে ধান বিক্রয় করতে আসা কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সময়মত বৃষ্টিপাত হওয়ায়, ঝড়-বজ্রপাত কম, এবার ফলন ভাল হয়েছে। বাজারে ধানের দাম আশানুরুপ পাওয়া যাচ্ছে। গত হাটে মন প্রতি ৯৫০/- টাকা দরে ধান বিক্রয় করেছি। আরেক কৃষক সনাতন বলেন, ফলন ভাল হয়েছে। এবার পোকা-মাকড়ের উপদ্র্য কম। তাপ প্রবাহে শুকনা ধান বিক্রয় করছি বস্তা প্রতি ১৯০০/- টাকা থেকে ২০০০ টাকা দরে। গড়ে ভাল দাম পেয়েছি।
এই বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, এবার বৃষ্টিপাত কম হয়েছে, তবে পোকা-মাকড়ের উপদ্র্য কম। উৎপাদন ভাল হয়েছে। আর প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে, আবহাওয়া ভাল থাকলে বাকী ৫৯% ধান তাড়াতাড়ি কৃষকরা কর্তন করবে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ এই জেলায় খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। বর্তমানে কৃষকরা ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত আর ভাল দাম পাওয়ায় কৃষকরদের মুখে হাসি উঠেছে। জেলায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এবার ছাড়িয়ে যাবে।