হাকিমপুর প্রতিনিধি\ ভারত থেকে আমদানির খবরে একদিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা কমেছে পেঁযাজের দাম। দিনাজপুরের হাকিমপুরে একদিন আগে দেশি পেঁযাজের কেজি ৭০ টাকা বিক্রি হলেও ১৫ মে সকাল থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
দাম কমায় খুশি ক্রেতারা। তারা বলছেন, স্বাভাবিক পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম নামিয়ে না আনলে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। এতে ভোগান্তি বাড়বে ক্রেতাদের।
এদিকে, ভারত থেকে পেঁযাজ আমদানির সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বন্দরের আমদানিকারকরা। সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, হিলি বাজারের প্রতিটি কাঁচাপণ্যের দোকানে পর্যাপ্ত দেশি পেঁযাজ মজুত রয়েছে। দামও কমেছে।
অবশ্য শিগগিরই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার। রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ সংক্রান্ত সভায় এ কথা বলেন তিনি। সভায় ওয়াহিদা আক্তার আরও বলেন, ‘উৎপাদন ও মজুত বিবেচনায় দেশে এই মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই। অথচ বাজারে দাম বেশি। কৃষি মন্ত্রণালয় বাজার পর্যবেক্ষণ করছে। দাম বাড়তে থাকলে শিগগিরই পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
হিলি বাজারে পেঁযাজ কিনতে আসা শেরেগুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের আগেও দাম স্বাভাবিক ছিল। সেসময ২৫-৩০ টাকা কেজিতে কিনেছি। ঈদের পর থেকে দাম বাড়তে বাড়তে ৭০ টাকায গিয়ে ঠেকেছে। এতে আমাদের মতো খেটে খাওযা মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। সোমবার সকাল থেকে কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। হঠাৎ আমদানি খবরে কমে যাওয়া মানে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজার অস্বাভাবিক করে তুলেছেন। কাজেই স্বাভাবিক পর্যায়ে দাম নামিয়ে আনার দাবি জানাই।’
স্থানীয় আরেক ক্রেতা ইযাকুব আলী বলেন, ‘রবিবার পেঁযাজ কিনেছি ৭০ টাকায়। আজ বাজারে এসে দেখি ৬০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলাবলি করছেন, ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে। এ জন্য দাম কমেছে। তাহলে এতদিন সরবরাহে ঘাটতি থাকার যে কথা ব্যবসায়ীরা বলেছেন, তা কারসাজি। এসব ব্যবসাযীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
আমদানির খবরে মোকামগুলোতে পেঁযাজের সরবরাহ আগের তুলনায বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন হিলি বাজারের ব্যবসাযী শাকিল খান। তিনি বলেন, ‘দুই মাস ধরে আমদানি বন্ধ। ঈদুল ফিতরের আগ পর্যন্ত দাম স্বাভাবিক ছিল। এরপর থেকে দাম বাডতে বাডতে ৭০ টাকায় উঠে গিয়েছিল। ইতোমধ্যে আমদানির অনুমতি দেওয়ার কথা বলেছে সরকার। এই খবরে মোকামগুলোতে সরবরাহ বেড়ে গেছে। যারা বাডতি দামের আশায মজুত করেছিলেন, তারা বাজারে ছেড়ে দিচ্ছেন। ফলে ৬০ টাকায় নেমে গেছে পেঁয়াজের কেজি।’
আমদানির অনুমতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম আরও কমে যাবে—এমনটি জানিয়েছেন হিলি স্থলবন্দরের পেঁযাজ আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কৃষকের উৎপাদিত পেঁযাজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে গত ১৫ মার্চ থেকে আমদানি বন্ধ রেখেছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। এ সুযোগে ৭০ টাকায উঠে গিয়েছিল দাম। সামনে ঈদুল আজহা। এ সময়ে পেঁযাজের বাডতি চাহিদা থাকে। ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় আমদানির অনুমতি দেওয়ার কথা বলেছে, এরই পরিপ্রেক্ষিতে কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। আমদানি শুরু হলে দাম মানুষের নাগালে চলে আসবে।’
আমদানির সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি উল্লেখ করে শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘কয়েকজন আমদানিকারক ২০ হাজার মেট্রিক টন পেঁযাজ আমদানির অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন। অনুমতি দেওয়ার পরদিন থেকে আমদানি শুরু হবে। আমদানিকৃত পেঁয়াজ ২৫-৩০ টাকার মধ্যে থাকবে।’
যে হারে দাম বাডছে তাতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দ্রুত মিলতে পারে বলে জানিয়েছেন হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী সংগনিরোধ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী। তিনি বলেন, ‘কৃষি মন্ত্রণালয থেকে আমদানির যেসব অনুমতি দেওযা ছিল, সেগুলোর মেযাদ ছিল গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত। এরপর আর অনুমতি দেযনি। ফলে ১৬ মার্চ থেকে দেশের সব স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি বন্ধ আছে। কবে নাগাদ আমদানি হবে, তা এখনও আমাদের জানানো হয়নি। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমদানির অনুমতি মিলতে পারে বলে শুনেছি।’